জাতীয়রাজনীতিসদরসিরাজগঞ্জ

তিনি নাকি টুস করে ঢুকে পড়বেন: জামায়াতের আমির

শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি টুস করে ঢুকে পড়বেন। গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের দারুল ইসলামী একাডেমি মাঠে জামায়াতের রুকন সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আপনি গেলেন কেন? আপনাকে কে যেতে বলেছিল? আপনি সবসময় বলতেন, আইন সবার জন্য সমান এবং আদালত স্বাধীন। আপনার এ কথাই প্রমাণ করে দিতেন, এটাই ছিল আপনার রাজনীতিবিদসুলভ আচরণ। তিনি আরো বলেন, আপনি আসবেন, আপনার আসা উচিত। কারণ যা করেছেন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে তা দেখা দরকার। লাখ লাখ মানুষকে দফায় দফায় আপনি আদালতে নিয়েছেন, মা-বোনদেরও ছাড় দেননি। আপনি আসুন, এরকম আরও যারা আছেন তাদেরও আসা উচিত। এটাই মানবতার দাবি।

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা অধ্যক্ষ শাহীনুর আলম সভাপতিত্বে ও জেলা শাখার সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বলেন, এমন রাজনীতি কেন করতে হবে, যে রাজনীতি করার পর আপনাকে পালানোর রাস্তা খুঁজতে হবে, সীমান্তে গিয়ে কলাপাতায় ঘুমাতে হবে।

জামায়াতের আমির এসময় বলেন, বাংলাদেশ তার রাস্তায় উঠেছে, কোনো অপশক্তি যদি বাংলাদেশকে এই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের প্রতিহত করবে।

তিনি বলেন, এ সময় জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন। জাতির মৌলিক ইস্যুতে সবাইকে এক থাকতে হবে। সমালোচনার পাশাপাশি সরকার যাতে সংস্কারের কাজগুলো করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, স্বাধীনতার পর মানুষ সুবিচার, সুশাসন আশা করেছিল। কিন্তু জনগণের সব আশা ব্যর্থ হয়। বিগত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? জাতির রক্ত চুষে নেওয়ার বিনিময়ে, সব দলকে কোণঠাসা করে আবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করার বিনিময়ে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। এদলের ০১ থেকে ১১ শীর্ষ পদের দায়িত্বশীল নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, জেলের ভেতরে তাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের কোনো দায়িত্বশীল নেতা যাদের অন্যায় অযৌক্তিক অভিযোগ দায়ের করে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে তাদের কেউ পালিয়ে যাননি। কারণ আমাদের কোনো মামার দেশ নেই, মাসির দেশ নেই, দাদার দেশ নেই। আল্লাহ এখানে জন্ম দিয়েছেন, এই দেশকে বুকে আগলে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই। এ দেশের সুখ-শান্তির সঙ্গে আমাদের অন্তরের সম্পর্ক মিশে আছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শাসকরা বরাবরই বলেছে মিডিয়া স্বাধীন। কতটুকু স্বাধীন সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। এখন আপনারা মুক্ত, আমরা দাবি করব যাতে আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার উষালগ্নে ঘোষণা দিয়েছি, আমরা প্রতিশোধ নেব না, প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হলো আইন হাতে তুলে নেওয়া। আইন যেখানেই হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে সেখানেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। আমরা চাই এই নোংরা কাজের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটুক। তবে ন্যায় ও ইনসাফের দাবি হচ্ছে- যিনি অপরাধ করেছেন, নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শাস্তি পেতে হবে। যদি সে আইনের শাসন বাংলাদেশে কায়েম হয়, তবে আগামীর বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শূরা সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, পাবনা জেলার আমির মো. আবু তালেব মণ্ডল, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম ও মাওলানা আব্দুস সালাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button