কামারখন্দসিরাজগঞ্জ

কামারখন্দে বীর নিবাস নির্মাণ কাজে ধীরগতি;  ভোগান্তিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

সারাদেশের ন্যায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কারী অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলাতেও বীর নিবাস নির্মাণকাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরকারি তালিকা অনুযায়ী উপজেলায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধাহত বীর পরিবারের সদস্যদের জন্য বীর নিবাস প্রকল্পের তালিকা করে ২০২১ সালে ১ম দফায় ১১ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও ২০২২ সালে ২য় দফায় ২২ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য সরকারিভাবে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রতিটি ১তলা বিশিষ্ট বীর নিবাসে ২টি শয়নকক্ষ, ১টি বসার কক্ষ, ১টি খাওয়ার কক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪লাখ টাকা।

সরেজমিনে উপজেলার জামতৈল, হায়দারপুর, কাজিপুরা, বাঁশবাড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ১ম ধাপের আবাসন প্রকল্পের বীর নিবাস দুই বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

হায়দার পুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী বলেন, দুই বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার। সময়ের সাথে সাথে কাজ না করে এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় কারণ দেখাচ্ছে ঠিকাদার । দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলমান থাকায় পূর্ণ ভোগান্তিতে পরেছি আমরা ।

কাজিপুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার এর স্ত্রী ফেরদৌসী আরা দুই বছরেও বীর নিবাস তৈরি না হওয়ায় আফসোস করে বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। ১টা ছেলে সেও চাকরিতে দূরে থাকেন। ঠিকাদারদকে বেশি কথা বললে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলে। এ ব্যাপারে ইউএনও অফিসে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। শুরুতে নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করলে আমি পিআইও অফিসে জানালে তারা এসে দেখে। তখন ভালো মানের ইট খোয়া দিয়ে কাজ করে। কিছুদিন না যেতেই কাজ বন্ধ। পুনুরায় কাজ শুরু হলে আবারো নিম্নমানের জিনিস পত্র দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার। দেখেন দুই বছরে ছাদ আর ইটের গাঁথুনি ছাড়া আর কি হয়েছে।

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী হাতেম আলী সেখ এবং তার পুত্রবধু সুফিয়া খাতুন বলেন, প্রথমে যে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিল তারা আর নেই। এখন নতুন ঠিকাদার কাজ করছে। কাজের মান ভালো না। মিস্ত্রীদের ফোন দিলে তারা বলে ইট, সিমেন্ট ঠিকাদার পাঠিয়ে আমাদের বললে আমরা কাজ করতে যাবো। ঠিকাদারকে ফোন করলে রিসিভ করে না। তাদের সাথে কথা বলা যায় না। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী হাতেম আলী সেখ অসুস্থ অবস্থায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন একা একা চলাফেরা করতে পারি না। বীর নিবাসে উঠপার পারমু কিনা জানিনা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনামুল এন্টার প্রাইজের মোস্তাক আহমেদ বলেন, যে ঠিকাদার প্রথমে কাজ শুরু করেছিল সে কিছু কাজ করে ২৫% বিল তুলে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে গত তিন মাস ধরে কাজ শুরু করেছি। আগামী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরিফুর জোয়ারদার বলেন, প্রথম ধাপের ১১টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৭৫% এবং ২য় ধাপের ৯৮% কাজ হয়েছে। আমরা বারংবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছি। যাতে করে তারা দ্রুত কাজ শেষ করে। এখন পর্যন্ত ১ম ধাপের জন্য ২৫% বিল উঠাতে পেরেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা বলেন, আমি নতুন এসেছি বীর নিবাস বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নেব। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button