উল্লাপাড়া প্রতিনিধি : পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবি নিয়ে দশম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে এ কর্মসুচী পালন করছেন। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখেই কর্ম বিরতি চলছে।
বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নিজস্ব কার্যালয় সহ দশম দিনের মতো সারাদেশের সবগুলো পল্লীবিদ্যু সমিতিতে একযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। তাদের অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতিতে সারাদেশে বিদ্যুৎ সেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তার নিজস্ব গ্রাহক প্রায় ১২ কোটি। সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে জীবনের ঝুঁকি ও ঝড়বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছে গ্রাহকদের। কিন্তু সমিতির তদারকি প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি’) দৈত নীতির কারনে ন্যায্য সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা এবং কর্মচারী।
একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পদ-পদবী, বেতন-ভাতা, বোনাসসহ পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে বলে অভিযোগে জানান তারা। শুধু তাই নয় বিআরইবির অদক্ষতা ও নিম্নমানের বিদ্যুৎ সামগ্রী সরবরাহের কারনে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহিতারা। তারা আরও জানান বিতরন লাইনে ব্যবহৃত বিআরইবির ক্রয় করা নিম্নমানের মালামালের জন্য উত্তম গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকেরা।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগে আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে এসব বৈষম্যে এবং অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়নের দাবিতে চলতি বছরের ০৫ই মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। ১০ মে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সমস্যা সমাধানে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আলোচনায় বসবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন আশ্বাসে কাজে ফেরেন তারা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী দাবি দাওয়া উল্লেখ করে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৭ হাজার ৫৪২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি বিদ্যুৎ বিভাগ সহ বিআরইবিতে জমা দেন এবং বোর্ডের প্রতি অনাস্থা জানান। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আলোচনায় বসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত আলোচনার কোন উদ্যোগ নেননি কতৃপক্ষ। এমন কি গত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে সকল কর্মচারি সাসপেন্ড, সংযুক্ত ও স্ট্যান্ড রিলিজ আছেন তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে মুক্ত করবেন। কিন্ত এ ব্যাপারেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি তারা।
তাই আবারো বাধ্য হয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নিপিড়ন ও শোষণ থেকে বাঁচতে পুণরায় দশম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানান তারা। সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত দুটি দাবি হলো- স্মার্ট ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিনির্মানে আরইবি ও পিবিএস একীভূত করণসহ অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যত বিদ্যুত ব্যবস্থা সচল রাখতে এবং গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের জন্য সকল চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণ। তাদের এ দাবি না মানলে সারাদেশে সবগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারিরা আগামীতেও লাগাতার কর্মসুচি পালন করবে বলে জানান তারা।