সদরসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের রাস্তায় শীতের পিঠা

বাংলায় হেমন্তকালের দ্বিতীয় মাস অগ্রহায়ণ চলছে। পঞ্জিকার পাতায় শীতকাল না এলেও উত্তরের হিম হওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। এতেই সিরাজগঞ্জের রাস্তায় শীতের পিঠাঅলিগলির রাস্তায় দেখা মিলছে শীতের পিঠার দোকান।

সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন শহর পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে ও বিভিন্ন সড়কে ভ্যানে চুলা বসিয়ে, আবার কোথাও অস্থায়ী দোকান বসিয়েও বিক্রি হচ্ছে শীতের পিঠা। ব্যস্ত এই শহরে চলতি পথে কর্মজীবীরা সেখান থেকে পিঠা কিনে খাচ্ছেন, আবার কেউ কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে পিঠা বিক্রি করতে মৌসুমি বিক্রেতাদেরও আগমন ঘটেছে এই শহরে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন শুধু মৌসুমি পিঠা বিক্রি করতে।

এদিকে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার শীতকালীন পিঠার দাম একটু বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা জানিয়েছেন, ৫ টাকায় কোনো পিঠা এখন আর নেই। যে পিঠা কয়েক বছর আগে ২ টাকা দামে খেয়েছেন, সেই সাইজের পিঠার দাম এখন ১০ টাকা। এটিই সর্ব নিম্নমানের পিঠা।

বিক্রেতারা বলছেন, সাইজে কমলেও বর্তমান বাজারমূল্যে ১০ টাকার নিচে পিঠা বিক্রি করার সুযোগই নেই। আমরা কয়েক বছর আগে এই পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করেছি।

শহরের এসএস রোডে ছোট্ট একটি ভ্যানে ভাপা পিঠা বিক্রির দোকান বসিয়েছেন মো. আমির হোসেন। তিনি শুধু পিঠা বিক্রি করতেই গত মাসে এখানে এসেছেন।

জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, সিরাজগঞ্জে ুআমি থাকি না। পিঠা বিক্রি করতেই গত মাসে সিরাজগঞ্জে আসা। এখানেই একটা মেসে উঠেছি। প্রতিবছর এখানেই বসা হয়। কোনো দিন একটু সামনে বা পেছনে। আমার মতো আরও অনেকেই এমন এসেছেন।

পিঠা বিক্রি ও দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার এখানে রেগুলার পিঠার দাম ১০ টাকা। এছাড়া ২০ টাকা দামের পিঠা চাহিদা মতো বানিয়ে দেওয়া হয়। যারা বাসায় নিয়ে যান, তাদের বেশিরভাগই ২০ দামের পিঠা অর্ডার করে বানিয়ে নেন। প্রতিদিন ৩ কেজির মতো চালের গুড়া নিয়ে আসি, এটা দিয়ে ১১০-১২০টির মতো পিঠা বানানো যায়। এখনও তো শীত শুরু হয়নি, কয়েকদিন পর ৫ কেজি চালের পিঠাও শেষ হয় যাবে।

এরপর বড়পুলের সামনে যেতেই দেখে মেলে আরেকটি পিঠার দোকানের। গত সপ্তাহে পিঠা বিক্রি শুরু করেছেন এই দোকানি।

জানতে চাইলে পিঠা দোকানি বলেন, আমার এখান চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। দুই ধরনের পিঠার ক্রেতারাই এখানে আসেন। আমর এখানে চিতই পিঠার সঙ্গে ৬ ধরনের ভর্তা আছে। প্রতি পিস পিঠার দাম ১০ টাকা। এছাড়া ভাপা পিঠা ১০টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করছি।

পিঠা খেতে খেতে কথা হয় সাইম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, বছর ৪/৫ আগেও ভাপা পিঠা পাওয়া যেতে ৫ টাকায়। দুইটা খেলেই পেট ভরে যেত। তারও আগে ২ টাকায় যে সাইজের পিঠা পাওয়া যেতে এখন সেই পিঠার দাম ১০ টাকা। মানে এখন পিঠা খেয়ে মন ভরতে অন্তত ৩০ টাকা খরচ করতে হবে। শুধু পিঠা না, যেটাই খেতে যান ১০ টাকার নিচে কিছুই পাওয়া যায় না।

বাহার আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, পিঠা তো একটা আবেগের বিষয়। আগেরদিনে দাদি-নানি পিঠা বানিয়ে খাওয়াতো। তারপর মা বানিয়ে খাইয়েছেন। এখন শহুরে জীবনে পিঠা বানিয়ে খাওয়ানোর মতো সুযোগ সবার হয় না। ফলে মৌসুমি এই পিঠাগুলো দেখলেই পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়। খুব ভালো হোক বা না হোক, একটু খাওয়ার চেষ্টা করি। শুধু সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় নয় উপজেলার বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০/১৫ দিন যাবৎ সব এলাকাতেই মৌসুমি পিঠার দোকানগুলো বসেছে। সেখানে শুধু ভাপা, চিতই ও তেলে পিঠা নয়, আরও বাহারি পিঠার আয়োজন রয়েছে। সাইজ ও উপকরণ ভেদে এক একটি পিঠার দাম ১০ টাকা থেকে শুরু। শীত মৌসুমে সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে এসব পিঠার দোকান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button