শারদীয় দুর্গা পূজার রোববার (১৩অক্টোবর) ছিলো বিজয়া দশমী। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এ ধর্মীয় উৎসবের।এসময় দেশ, জাতী ও সারাবিশ্বের মঙ্গল ও শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের পাশাপাশি সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান ও শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো এবার সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা মোড় থেকে বিজয় শোভা যাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ধায় যমুনা নদীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই উৎসবের। ফিতা কেটেশোভা যাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ।
শোভা যাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নাহিদ আল আমিন, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু,জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু, ,জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিৎ সাহা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অমর কৃষ্ণ দাস ও নাজমুল হাসান তালুকদার রানা. যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হারুনর- রশিদ খান হাসান ও মোস্তফা নোমান আলাল,বিএনপি নেতা ভিপি শামীম, আবু সাইদ সুইট এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাজেশ,জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সনজয় সাহা, ব্রাহ্মন সংসদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক অশোক ব্যানার্জী, অ্যাডভোকেট কল্যাণ কুমার সাহা জেলা হিন্দু বৌদ্ধখ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি ডাঃ আনন্দ কুমার সাহা ও পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক হীরকগুণ প্রমূখ। সনাতন ধর্মের মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবী দুর্গা । তার এ আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচদিন চলে দুর্গোৎসব।
এদিকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সেনাবাহিনী, আনসার ও র্যাব বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় দুর্গাপুজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। জেলায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্রাহ্মন সংসদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক অশোক ব্যানার্জী বলেন, এবার নবমী ও দশমী তিথি একদিনে পড়ে। নবমী তিথি শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার সকাল ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত ছিল। ফলে পুরোহিতগণ শনিবার ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা করেন। এবার তিথি অনুযায়ী, নবমী পূজা সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮টা ৫০ মিনিটে দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করা হয়। একইদিন পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা। তিনি আরও জানান সাধারণত দশমীর দিন দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে। কিন্তু এবার সেটি হয়নি। এর কারণ দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের নিয়ম থাকলেও আরেকটি নিয়ম আছে। ওই দিনের মধ্যে যদি শ্রবণা নক্ষত্রের শেষ প্রাত হয়, তাহলে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। কিন্তু শনিবার শ্রবণা নক্ষত্রের শেষ প্রাত হয়েছে অনেক রাতে। ফলে রাতে তো বিসর্জন দেয়া যাবে না। এজন্য রোববার প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। তবে দশমীর যে পূজা, সেটি শনিবারে দিনেই করা হয়।
জেলা প্রশাসক(ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলায় এবছর ৫০১টি মন্দির মন্ডপে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধার্মালম্বীদের বৃহত উৎসব দুর্গাপুজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ করতে জেলার আইন শৃংখলা বাহিনী সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিকবার মতবিনিময় করা হয়। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ সবাই সার্বিক সহযোগীতা করেছেন এবং যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করেন তারা।
জেলার কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া মন্দির কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার বসাক বলেন, কেন্দ্রীয় মন্দিরে বরাবরই ভক্ত দর্শনার্থীর ভীড় বেশী থাকে। কেন্দ্রীয় মন্দির সহ জেলায় পূজা উদ্যাপনের জন্য আগে থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী এবং বিভিন্ন রাজিৈনত দলের নেতাকর্মি সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পূজা মন্ডপ গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এর পাশাপাশি নিজ দায়িত্বে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, ২ অক্টোবর দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলা পুলিশ বিভাগ জেলা প্রশাসন সহ সকল আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে দুর্গা পূজা উদযাপনে দায়িত্ব পালন করেন। জেলার অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপ গুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। একই সাথে কাজ করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারের দূর্গা পুজা শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হয়েছে।