কামারখন্দসিরাজগঞ্জ

এনডিপি “সমন্বিত কৃষি ইউনিট”এর উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

এনডিপি “সমন্বিত কৃষি ইউনিট”এর কৃষি খাতের আওতায় ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন এবং মালচিং পেপার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের উপর দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ও বুধবার কামারখন্দ উপজেলার কাটাখালি শাখার কাটাখালি গ্রামের কৃষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন কামারখন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন। আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি সিরাজগঞ্জ এর উপপরিচালক আ: জ: মু: আহসান শহীদ সরকার। কামারখন্দ উপজেলার নুরনগর গ্রামের সফল কৃষি উদ্যোক্তা আবদুস সবুর।

প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে উপপরিচালক তার বক্তব্যে বলেন মালচিং মূলত বিষমুক্ত ফসল চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। শীতকালে মালচিং ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং গরমকালে মাটি ঠান্ডা থাকে। সঠিক মালচিং প্রয়োগে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়। মালচিং পেপার ব্যবহারে জমিতে আগাছা জন্মানোর কোন সুযোগ নেই। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে জমিতে পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ কম লাগে। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। যেহেতু মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পানি কম লাগে ফলে সেচ খরচ বাঁচে, লাভ হয় বেশি।

এ পদ্ধতিতে চাষ করলে ফসলের জীবনকাল বৃদ্ধি পায়, জমিতে আগাছা হয়না, বললেই চলে। মালচিং পেপারে কার্বন থাকার কারণে আদ্রতা ধরে রাখে এবং সারের গুনাগুন ঠিক থাকে ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। একই মালচিং পেপার একাধিক সবজি ফসল চাষে ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য সবজি ফসল যদি এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায় তাহলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে। তবে এ পদ্ধতিতে প্রথমে অর্থ খরচ বেশি হলেও সামগ্রিকভাবে লাভ ও অনেক বেশি হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্ত নিরাপদ খাদ্যের এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান কৃষি অনেক প্রতিকূল আবহাওয়া অতিক্রম করছে। একটানা বৃষ্টি এবং খরা বর্তমান সময়ে কৃষিকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য প্রচুর জৈব সারের ব্যবহার করতে হবে। সেজন্য ট্রাইকো কম্পোস্ট সার প্রত্যেক কৃষক পরিবারে স্বল্প পরিসরে তৈরি করতে হবে। ট্রাইকো সারকে বলা হয় মাটির প্রাণ। আমাদের দেশের মাটিতে জৈব সার আছে শতকরা প্রায় ১ভাগ। কিন্ত বিজ্ঞানসম্মতভাবে থাকার কথা ৫ ভাগ। এই চিত্র মাটির জন্য ভয়াবহ। ট্রাইকো কম্পোস্ট এবং মালিচিং পেপারের ব্যবহার এই দুটি উপাদান নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্যতা অনেকাংশে নির্ভর করে। সেজন্য নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহনে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করেন।

সফল খামারী আবদুস সবুর, তার বক্তব্যে বলেন এনডিপি কৃষি ইউনিটের মাধ্যমে এই বছর টমেটো প্রথম চাষ করেন। টমেটো ব্যাপক ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন পরিপক্ক টমেটো শুরুতে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। ২২ শতাংশ জমিতে মোট খরচ হয় আনুমানিক ৩৬ হাজার টাকা। কিন্ত টমেটো বিক্রি করেছেন এযাবৎ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি আগামীতে টমেটো চাষ আরও সম্প্রসারণ করবেন। উপস্থিত অন্যান্য কৃষক সবুরের সাফল্য দেখে মালচিং দিয়ে টমেটোসহ অন্যান্য সবজি করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী দিনে মারিচিং দিয়ে টমেটো চাষ সরজমিনে পরিদর্শন করা হয়। প্রত্যেক কৃষককে বিণামূল্যে কোকোডাস্টে উৎপাদিত চারা বিতরণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button