সদরসিরাজগঞ্জ

প্রয়াত নেতা মির্জা মোরাদুজ্জামানের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, সিরাজগঞ্জ-২ সদর আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষিয়ান জননেতা মির্জা মোরাদুজ্জামানের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।

গত মঙ্গলবার(১৮জুলাই) সকালে মির্জা মোরাদুজ্জামান স্মৃতি সংসদের আয়োজনে সদস্য সচিব আখতারুজ্জামান ফকিরের সভাপতিত্বে শহরের পৌর এলাকার মালশাপাড়া কবরস্থান মাঠে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপি নেতা মিলন ইসলাম খান ও আসলাম উদ্দিন।

এছাড়া ও বাদ আছরে পৌর এলাকার ধানবান্ধি বিএল স্কুল রোড জামে মসজিদ ও বাদ মাগরিব জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল করা হয়েছে।  অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উল্লাপাড়া উপজেলার সাবেক এমপি এম আকবর আলী, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম, ডা. নাজমুল হক, সাবেক পৌর মেয়র অ্যাড. মোকাদ্দেস আলী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি খ.ম. রকিবুল হাসান রতন, জেলা জামায়াত ইসলামের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হেলাল আহমেদ, আনিছুর রহমান, রবিউল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, খোশ মাহমুদ, বাসদের নেতা নব কুমার সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতৃবন্দসহ মরহুমের আত্মীয়- স্বজন, শুভাকাঙ্খী সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য,মির্জা মোরাদুজ্জামান সিরাজগঞ্জ সদর থানার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের অন্তর্গত কুড়িপাড়া গ্রামে ১৯৩৯ সালের ১১ মার্চে এক সভ্রান্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ মুসলিম হাই স্কুলে ছাত্রাবস্থায় প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে সক্রিয়তা বেড়ে উঠেন। তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের মধ্যে বিড়ি-শ্রমিকদের সংগঠিত করে তাদের বাঁচার দাবী পাট-সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জে জুটমিল প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল আজম খান সিরাজগঞ্জে আসেন এবং নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার পর জুট মিল প্রতিষ্ঠার পর বহু বেকার বিড়ি শ্রমিক জুট মিলে চাকরি পায়। ১৯৬৩ সালে মিল শ্রমিকদের নিয়ে কওমী মজদুর ইউনিয়ন গঠনেও তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে কওমী জুট মিলের শ্রমিক নেতৃবন্দ কারাগারে গেলে তিনি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে আইয়ুব খান এবং পাক গর্ভণর মোনায়েম খান বিরোধী শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে মির্জা মোরাদুজ্জামানসহ ১৭ জন নেতা কর্মী গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ১১ মাস কারা ভোগের পর তিনি আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মির্জা মোরাদুজ্জামান অকুতোভয় নেতা মাওলানা ভাসানীর রাজনীতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরেন। তিনি ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠে। এ সময় মির্জা মোরাদুজ্জামান মাওলানা ভাসানীর সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন।

১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করলে মির্জা মোরাদুজ্জামান বিএনপি গঠনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। স্বৈরাচারের পতনের পর ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মির্জা মোরাদুজ্জামান বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিরাজগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা মির্জা মোরাদুজ্জামান ১৯৯৫ সালের ১৮ জুলাই ভোরে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম মির্জা মোরাদুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর সম্মানে সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাণিজ্য ভবনকে মির্জা মোরাদুজ্জামান ভবন নামে নামকরন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম কওমী মাদরাসা ইমাম হাফেজ মাওলানা জুবায়ের হোসেন পবিত্র কোরআন পাঠ ও প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হাকিম দোয়া করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button