ছাত্র জনতার গণ অভ্যুন্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পূর্তিতে শহিদদের স্মরণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সিরাজগঞ্জে শহীদি মার্চ র্যালি ও শহিদ স্মৃতিতে স্মরণ সভা- দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এ কর্মসূচী হাজারো শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে পালিত হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, সকালে শহরের বাজার স্টেশন সংলগ্ন শহিদ মিনার হতে শিক্ষার্থীদের র্যালি শুরু করে মুজিব সড়ক, চৌরাস্তা মোড়, এসএস রোড হয়ে পুনরায় শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা স্মৃতিতে স্মরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সমন্বয়ক মো. মুনতাসির মেহেদী হাসান।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র সমন্বয়ক যুবাইর আল ইসলাম, সেজান, সালমান জোয়ারদার, ইয়াসির আরাফাত, সজীব সরকার, মোছা. রাজিতা খাতুন, সাদিয়া সিনহা, সমন্বয়ক রাহাত তালুকদারসহ সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণ সভায় বক্তাগণ বলেন, এই আন্দোলনে আমরা প্রত্যেকে যারা বেঁচে আছি তারা গাজী, আর যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা শহিদ। বক্তারা আরো বলেন, আমরা একটা স্বৈরাচারীকে সরিয়েছি, মনে রাখতে হবে স্বাধীনতার অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন, এখনো আমরা সোনার বাংলা করতে পারি নাই, আমাদের সততা নিষ্ঠা ও আদর্শ দিয়ে সোনারবাংলা গড়তে হবে। ১৬ জুলাই এর পর থেকে স্বৈরাচারী সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আমরা অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তবুও আমাদের আন্দোলন দাবায়ে রাখতে পারে নাই শুধুমাত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধতার কারণে। একার পক্ষে কোন কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়, সামনের দিনে আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে যতই বাধা আসুক কোন কাজ হবে না। বক্তাগন আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত কিছু দুষ্কৃতকারী দেশে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, আমাদের এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে এই দুষ্কৃতকারীদের রুখে দেওয়ার জন্য। তারা বলেন শেখ হাসিনা ও তার দোষররা নির্বিচারে বহু শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা ও আহত করে। সভায় বক্তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সাথে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানান। শেষে নিহতদের রুহের মাগফেরাত এবং আহতদের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনায় দোয়ার মাধ্যমে শহীদি মার্চ র্যালি, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলতি বছর ৫ জুলাই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে যৌক্তিক কোটার দাবিতে অহিংস আন্দোলনের সূচনা করেন। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ^বিদ্যালয়, পলেটেকনিক ইন্সষ্টিটিউ, সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে গড়ে তোলে। আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে আওয়ামী সরকার দমন, পীড়ন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ৮০০ শতাধিক আন্দেলনকারীকে হত্যা করে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়। অবশেষে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। শেষাবধি গত ৫ আগষ্ট লক্ষ ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোড়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় দেশের প্রবীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এভাবেই পতন হয় স্বৈরাচারের। এদিনটি স্মরণে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ শ্লোগানে শ্লোগানে আবারও জানিয়ে দিলো ছাত্র-যুবকরা দেশের স্বার্থে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ।