আশরাফুল আলম, কাজীপুর: যমুনার আগ্রাসী তাণ্ডবে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্জলে একেরপর এক বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক দিনের ভাঙনে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের তেকানী ইউনিয়নের হাড্ডির ঘাট এলাকার পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে আরেক প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নিশ্চিন্তপুরের ডিগ্রি দোরতা এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের শুরু হয়েছে। এখানেও নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা। যতসামান্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও যমুনার আগ্রাসী তাণ্ডবে মুহুর্তেই এ ব্যাগ হারিয়ে যাচ্ছে অতলে।
সরেজমিনে জানা গেছে, তেকানী ইউনিয়নের কান্তনগর, চরকান্তনগর ও চর আদিত্যপুরে ব্যাপক ভাঙন তাণ্ডব চালিয়েছে যমুনা। এতে করে এসব এলাকার অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারা এসব মানুষের কেউ বসবাস করছেন অন্যের বাড়ি কেউবা আবার উজানে কিনারবেড় চরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বসবাস শুরু করছেন। সর্বগ্রাসী যমুনার ভাঙনে ওই অঞ্চলের অন্তত দেড়শ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। ভাঙনে কান্তনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, চরকান্তনগর তালুকদারবাড়ী মসজিদ নদীতে বিলীন হয়েছে।এছাড়া প্রায় পৌণে এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা ধসে গেছে নদীগর্ভে। চরকান্তনগরের কড়িতলা জামে মসজিদটি বর্তমানে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
ভাঙনে ভিটে হারা কান্তনগরের আব্দুর রাজ্জা ভুঁইয়া বলেন, ‘দেখতি দেখতি আমাগোরে সব ঘরবাড়ী ভাইঙ্গ্যা নদীত চইল্যা গ্যালো। চোহের সামনেই সব হারাইলাম। কিছুই কইরব্যার পাইরল্যাম না।’
তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম সিবন চাকলাদার বলেন, ‘ভাঙনে আমাদের সব কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। জিও ব্যাগ ফেলতেছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আমাদের জন্য স্থায়ী কোন কিছু করে দিতে হবে যাতে আর না ভাঙে।’
তেকানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ বলেন, ‘ভিটেমাটি হারা মানুষগুলো এখন চরের মধ্যে বসবাস করতেছে। ভাঙন অব্যাহত আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে উপজেলা জমা দিয়েছি। এখনও কোন সহায়তা পাননি নদী ভাঙা মানুষেরা।’
অন্যদিকে চরাঞ্চলের আরেক ইউনিয়ন নিশ্চিন্তপুরের ডিগ্রি দোরতায়ও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বিস্তীর্ণ এই ইউনিয়নকে রক্ষায় নির্মীত বাঁধের প্রায় সোয়া কিলোমিটার ধসে গেছে। অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি চলে গেছে নদীতে। শেষ রক্ষা হয়নি ডিগ্রি দোরতা উচ্চ বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টির চালা খুলে অন্যত্র নেয়া হয়েছে একদিন আগেই। সরিয়ে নেয়া ঘরের জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন,‘ যমুনার ভাঙন থেকে আমরা বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করতে পারলাম না। ভাঙন রোধে তেমন কোন সহায়তা পাচ্ছে না চরাঞ্চলবাসী। কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না নিলে চরাঞ্চলকে রক্ষা করা কঠিন।’
এ ব্যাপারে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, ‘ভাঙন কবলিতদের তালিকা হচ্ছে। সরকারি কোন বরাদ্দ আসলেই তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আসলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তো অনুদানের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন,‘জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে ভাঙন স্থলে। এখনও কোন প্রকল্প নেয়া হয়নি। তবে চরাঞ্চল রক্ষায় একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলছে।