মো. শাহ্জালাল: ১৫ নভেম্বর ২০০৩। দিনটি অনেকের কাছে বিভিন্ন কারণে স্মরণীয় হলেও আমার কাছে একটু ভিন্ন। অনেক চাওয়া অনেক না পাওয়ার দিন। দূর থেকে যাকে দেখেছি, যার সাফল্যের কথা লোকমুখে শুনেছি তার সান্নিধ্য পাওয়ার প্রবল আকাক্সক্ষা হারানোর দিন।
প্রতিদিনের মত গ্রামের বাজারে বেশ লোক সমাগম। যদিও ফজরের নামাজের পরেই হাঁটতে হাঁটতে বাজারে সমবেত হওয়া এই গ্রামের একটি পুরাতন ঐতিহ্য। পারস্পারিক দেখা সাক্ষাৎ, কুশলাদি বিনিময়, বসত-বাড়িতে চাষ করা সবজি, নদীর মাছ কেনাবেচা এগুলো প্রতিদিনের চিত্র। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধু একটি বাক্য যেন সবার মুখে ব্যতিক্রম শোনা গেল “প্রফেসর সাহেবের অবস্থা নাকি ভাল না”।
প্রফেসর বলতে তখন অত্র এলাকায় একটি নামই বুঝানো হতো। আবাল বৃদ্ধ বণিতা, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবার কাছেই তিনি প্রফেসর সাহেব নামে পরিচিত। বলছি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান লোকাচারবেত্তা, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, লোকতাত্ত্বিক, কবি, সংগঠক, সমাজসেবক ও শিল্পপতি সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের কথা।
১৫ নভেম্বর ২০০৩, সকাল সাড়ে আটটার দিকে সংবাদ শোনা গেল প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা হলো। সংবাদ প্রচারের পর এলাকার মানুষের মধ্যে একটা চাপা কান্না যেন লক্ষণীয় ছিলো। সবার মুখে কি যেন একটা হারানোর বেদনা, যেন তারা সবচেয়ে আপন কাউকে হারিয়েছে। সত্যি বলতে তিনি ছিলেন এলাকার মানুষের অভিভাবক। তখন আমার বয়স অনেক কম ছিলো, মাধ্যমিকে পড়াশোনা করি। মৃত্যুর পূর্বে প্রফেসর সাহেবের যে নাম ডাক শুনেছি তখন থেকেই তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয় জীবনে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের চলে যাওয়ার ২০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে ঠিক; কিন্তু তার রেখে যাওয়া বই, গল্প কবিতা, সাহিত্যকর্ম তাঁকে পাঠকের হৃদয়ে আজও রেখেছে প্রাণবন্ত।
প্রফেসর মযহারুল ইসলাম ১৯২৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের করতোয়া নদীর কোল ঘেষা সবুজ শ্যামল এক নিরব পল্লী চরনবীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোহাম্মাদ আলী পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক এবং সমাজসেবী ছিলেন। মাতা ছিলেন রত্নগর্ভা জনাবা সালেহা বেগম। ৫ সন্তানের মধ্যে জনাব মযহারুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়। উপরে যে বাজারের কথা উল্লেখ করেছি তা প্রফেসর মযহারুল ইসলামের মাতা সালেহা বেগমের নামেই “চরনবীপুর সালেহা বাজার”।
গ্রামের আর দশটি পরিবারের সন্তানের মত তিনি গ্রাম্য স্কুলেই তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ছেলে বেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসামান্য মেধার অধিকারী। মযহারুল ইসলাম যখন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। তিনি নদী বিধৌত অঞ্চলের মানুষ। শৈশব থেকেই তিনি নদী, বর্ষা, বৃষ্টি এবং প্রকৃতি নিয়ে কবিতা লেখেন। পাশ^বর্তী করতোয়া নদী পাড় হয়ে তালগাছী আবু ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়। সেখান থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে রাজশাহী সরকারি কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে অনার্স পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলা এম.এ প্রিভিয়াস পরীক্ষায় এবং ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত এম এ ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই সঙ্গে তিনি স্বর্ণ পদক এবং কালীনারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন, ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ছেড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি পরপর দুইটি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে “মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে হেয়াত মামুদ” বিষয়ে এবং ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “লোকাচারবিদ্যায়” দ্বিতীয় পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন।
১৯৬৩ সালে তিনি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন এবং বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি একই বিশ^বিদ্যালয়ে কলা অনুষদের ডীন নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। হার্ভার্ডের অধ্যাপনা শেষ হবার পর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি এ্যাট বার্কলীতে কিছুদিন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। নিজ জন্মস্থান চরনবীপুর সহ শাহজাদপুর উপজেলাকে তিনি বানিয়েছেন শিক্ষানগরী। তার অনুপ্রেরণায় গ্রামের বহু শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন খ্যাতিম্যাান প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ গ্রামে স্থাপন করেন চরনবীপুর নুরহাজান মযহার স্কুল এন্ড কলেজ যা উপজেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত চৌকস ও দুরদৃষ্টি সম্পন্ন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপনের পর দেশে যে ব্যাপক গণ-আন্দোলন শুরু হয়, সে গণ-আন্দোলনে প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম সরাসরি ভূমিকা রাখেন এসময় বঙ্গবন্ধুর সাথে তার আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৬ দফা আন্দোলন ধীরে ধীরে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে দেশের প্রথম সারির নেতাদের সাথে ড. মযহারুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
ড. মযহারুল ইসলাম প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। নিজের পরিবারের সুখ-শান্তির চেয়ে দেশের স্বাধীনতাকে তিনি বড় করে দেখেছেন সবসময়। পরিবার পরিজনকে বিভিষীকাময় পরিস্থিতির মধ্যে রেখেও ড. মযহারুল ইসলাম স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্রে প্রতিদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসী ও বলিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। দেশের ক্রান্তিকালে একই সঙ্গে কলম এবং অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন প্রফেসর মযহারুল ইসলাম। ১৬ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর কালবিলম্ব না করে ১৯৭১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে যাঁদেরকে কোলকাতা থেকে ঢাকাতে নিয়ে আসা হয় প্রফেসর মযহারুল ইসলাম ছিলেন তাঁদের একজন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয় বাংলা একাডেমি।
বতমানে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলা একাডেমি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। একাডেমির কার্যনির্বাহী প্রধান হিসেবে থাকেন একজন মহাপরিচালক। ২ জুন ১৯৭২ সালে এর প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে প্রফেসর মযহারুল ইসলাম নিযুক্ত হন। ২২শে মার্চ ১৯৭২ থেকে ১৮ই আগস্ট ১৯৭৪ পর্যন্ত এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা একাডেমি পরিচালনায় প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দেন। তার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি দ্রুত বাংলাদেশের প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
দেশ স্বাধীনের পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নানা জটিলতা দেখা দেয়। বিরাজমান জটিলতা নিরসনকল্পে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ১৯শে আগস্ট ড. মযহারুল ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার পরিজনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ১৯শে সেপ্টেম্বর ড. মযহারুল ইসলামকে উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বিবেচনায় রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ তিন বছর তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা হয়। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি তাঁর স্থায়ী পদ বাংলা বিভাগের প্রফেসর পদে যোগদানপত্র জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে বাংলা বিভাগে তাঁর নিজ পদে যোগদান করতে দেয়া হয় নি। এই পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ভারতীয় ইউজিসির আমন্ত্রণে তিনি চলে যান ভারতে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রাচী বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ছয় বছর শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।
সমাজসেবা ও শিল্পোন্নায়নে প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের রয়েছে বিশেষ অবদান। পরিবার পরিজনের জীবিকার স্বার্থে এবং মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত পেনশনের টাকা এবং বনানীতে নিজ নির্মিত বাড়িটি জনতা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ১৯৮৭ সালেজ জ্যেষ্ঠপুত্র চয়ন ইসলামের মাধ্যমে মযহারুল ইসলাম ঢাকায় স্প্যারো এ্যাপারেলস্ লিমিটেড নামে পোশাক শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করেন ও আজীবন এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পোশাক শিল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১২ হাজার মানুষের কমসংস্থান হয়েছে। একজন শিক্ষাবিদ হয়েও শিল্পপতি হিসেবে তিনি যে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেন তা দেশের মানুষের কাছে আজও অনুকরণীয় হয়ে আছে।
ড. মযহারুল ইসলাম তার জীবনের পুরো সময় শিক্ষা, শিল্প আর রাজনীতির জন্য ব্যয় করলেও তার সাহিত্য চার্চা কখনো থেমে থাকেনি। জীবন সায়াহ্নে রোগশয্যাতেও তিনি প্রিয় জন্মভূমি চরনবীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান করতোয়া নদীর কথা ভুলতে পারেন নি। তিনি লিখেছেন,
“রোগশয্যা পিছে ফেলে কবিতার হাত ধরে চলে যাই কখন যে কৈশরের করতোয়া পাড়ে।
সেই তিল ক্ষেত জ্যৈষ্ঠ শেষের জল নতুন জোয়ার। পাতি কাকদের ভিড়।
সেই খেয়া পারাপার। গামছায় মাছ ধরা। সবকিছু সামনে দাঁড়ায় সবই কবিতা।”
জীবনের অন্তিম প্রহরে তিনি গবেষণাধর্মী ‘ফোকলোর’ পত্রিকা এবং মাসিক ‘মেঘবাহন’ নামে সৃজনশীল রুচিসম্মত যে দুটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন, নানা কারণে পত্রিকা দুটি বিশিষ্টতার দাবিদার। বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটির তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি দশের অধিক কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন এবং ২৫-এর অধিক প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন যা পাঠক সমাজে অধিক সমাদৃত। ফোকলোর গবেষণায় তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৭০ সালে তাঁকে তৎকালীন পাকিস্তানের উচ্চতম সাহিত্য পুরস্কার ‘দাউদ পুরস্কার’-এ ভূষিত করা হয়। তিনি বেশ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ, ছোট গল্প ও উপন্যাসও লিখেছেন, পাশাপাশি তিনি বিদেশী ভাষায় গবেষণা গ্রন্থও রচনা করেন।
শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে “একুশে পদক (মরণোত্তর)” প্রদান করে।
বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ ২০০৩ সালের ১৫ নভেম্বর সকাল ৮:১১ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার অসংখ্যা ছাত্র শিক্ষকসহ ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে চারটি জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৮ নভেম্বর নিজ উপজেলা শাহজাদপুরের শক্তিপুরে নিজস্ব বাসভবন “নুরজাহান ভিলা”-তে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখনও মহান এই ব্যক্তির জন্মভূমি চরনবীপুর এলাকাসহ দেশী বিদেশী মানুষ তার কবর যিয়ারতে করতে ভোলেন না।
প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম বর্তমান সময়ের সকল শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিল্পপতিদের কাছে এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে বেঁচে আছেন।
লেখক: মো. শাহ্জালাল, পিএইচডি গবেষক ও লেখক