মরদেহ উদ্ধারের তিনদিনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চাঞ্চল্যকর মুদি দোকানি রইস উদ্দিন (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মাত্র ১৬ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে তাকে পরিকল্পিতভাবে গলাকেটে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য জানান শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম আলী।
এর আগে বুধবার (২০ নভেম্বর) শাহজাদপুর পৌর এলাকার নলুয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও রক্তমাখা লুঙ্গি এবং রইসের ট্রাউজার জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন, শাহজাদপুর উপজেলার নলুয়া গ্রামের আজিজ আলী মন্ডলের ছেলে মো. মামুন (২৮) ও জুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়ার মৃত রানু শেখের ছেলে মো. জয়নাল শেখ (৫০)।
নিহত রইস উদ্দিন একই উপজেলার কাঙলাকান্দা নলুয়া গ্রামের বাসিন্দা।
ওসি আসলাম আলী বলেন, ১৮ নভেম্বর বিকেলে নলুয়া বটতলা এলাকায় ডোবা থেকে রইস উদ্দিনের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের পরিবার জানায়, রইস উদ্দিন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে গেলে তিনি আর বিয়ে না করে একাই থাকতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন। প্রতিদিন সকাল ৬টায় নলুয়া বটতলা এলাকায় তার দোকান খুলতেন এবং রাত ১০টায় বন্ধ করে বাড়ি যেতেন। গত ৩ নভেম্বর যথারীতি সকাল ৬টায় দোকানে গেলেও আর বাড়িতে ফেরেননি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে ছেলে দুলাল হোসেন ৮ নভেম্বর থানায় জিডি করেন। নিখোঁজের ১০ দিন পর ১৮ নভেম্বর তার নলুয়া বটতলা এলাকায় শফিকুলের ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্দেহভাজন আসামি মামুন ও জয়নালকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে টয়লেট থেকে নিহতের দুটি ফোন, মামুনের বাড়ি থেকে রইস উদ্দিনের ট্রাউজার, বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. মামুন পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ও জয়নাল একজন ভবঘুরে। তারা দুজনেই মাঝে মাঝে রইসের দোকানে বসে আড্ডা দিতেন। আর্থিক সংকট থাকায় আসামি মামুন ও জয়নাল রইসের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন একটি চাকু সংগ্রহ করেন এবং ৩ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে তারা রইসকে অনুসরণ করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রইসের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে তাকে ডেকে বাইরে বের করেন। এরপর জয়নাল তাকে চেপে ধরে এবং মামুন চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর গামলায় করে রক্ত তুলে টয়লেটে ফেলে দেয় এবং রইসের ফোন দুটিও ফেলে দেয়। মামুনের রক্তমাখা লুঙ্গি ও চাকু বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। রইসের ঘরের ভেতরে ঢুকে তোষকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা দুজনে ভাগ করে নেয়। এরপর মামুন রইসের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেয়। ওসি আসলাম আলী আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।