আব্দুল বারী খন্দকার: চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার শুটকি পল্লী গুলোতে এ বছর কাঁচা মাছের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যে কারণে চলতি মৌসুমে চলনবিলে শুটকি উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট জেলে ও শ্রমিকেরা। হাতেগোনা দু’চারজন ব্যবসা শুরু করলেও বেশির ভাগ শুটকি মাছ ব্যবসায়ী এখনো ব্যবসা শুরুই করতে পারেননি। আর যারা ব্যবসা শুরু করেছেন কাঁচা মাছের দাম বেশি হওয়ায় তাদের অধিকাংশই লোকসান গুনছেন। প্রতিবছর সাধারণত ভাদ্র মাস থেকে এ এলাকায় সীমিত আকারে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়। পানি কমার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মাছের যোগান। এ বছর আশ্বিন মাস শুরু না হতেই বিলগুলো প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিলের পানি কমে আসলেও চলনবিলের জেলেদের জাল সহ মাছ ধরার অন্য উপকরণ গুলোতে খুব একটা মাছ ধরা পরছে না। কিছু শুটকি ব্যবসায়ী সীমিত পরিসরে মাছ শুকানোর কাজ শুরু করলেও অনেকেই এখনো শুটকির চাতাল স্থাপন করেননি। বিলের পানিতে মাছ নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে মাছ শুকানোর কাজ চললেও এবার সেই সময় বিলে পানিই থাকবেনা এমন আশংকা তাড়াশ মহিষলুটি এলাকার জেলে ও শুটকি মাছ ব্যবসায়ীদের। শুটকির মৌসুম শুরু হলেও চলনবিল এলাকার শুটকি শ্রমিকদের ব্যস্ততা নেই। অন্যান্য বছর এ সময়ে সকাল থেকে রাত অবধি মাছ কেনা, ধোয়া, চাতালে শুকানো ও বাছাই করে পৃথক করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন চলনবিল এলাকার শত শত নারী ও পুরুষ শুটকি শ্রমিক। চলনবিলের মাঝ দিয়ে নির্মিত বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে চলাচলের সময় মহিষলুটি এলাকা অতিক্রমকালে যে কারো নাকে লাগতো শুটকি মাছের গন্ধ। এবার চিত্র ভিন্ন। মহিষলুটি ছাড়াও চলনবিলের আত্রাই, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া, হালতী, লাহিরী মোহনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাছ শুকানো হলেও প্রায় সর্বত্রই চলছে মাছ সংকট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলনবিল এলাকার উল্লেখযোগ্য ৪৮টি বিল, ১৪টি খাল ও ১১টি নদীতে একসময় প্রচুর পরিমানে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। জেলেরা বিভিন্ন ধরণের মাছ ধরার উপকরণের সাহায্যে মাছ ধরতো। তখন অভাব কি জিনিষ বুঝতো না তারা। বর্ষাকালে মাছ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিতো। বর্ষার শেষ দিকে এসে উদ্বৃত্ত মাছ শুটকি করতো। উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর, নিলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হতো শুটকি মাছ। কালের বিবর্তনে অনেক প্রজাতির মাছই এখন বিলুপ্তির পথে। প্রায় বিশ বছর যাবত চলনবিল এলাকায় শুটকি মাছের ব্যবসা করেন মহিষলুটি গ্রামের আলতাব হোসেন। তিনি জানান, অন্যান্য বছর ভাদ্র মাসেই আমাদের ব্যবসা পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। এ বছর কেবল মাত্র শুটকি চাতাল স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। বিলের পানি কমে আসছে। এ বছর মাছ কম এটা নিশ্চিত তবে কতটা কম হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। মাছ কম হলে দাম বেশি হয়। দেবীপুর গ্রামের শুটকি মাছ ব্যবসায়ী আজমল হোসেন জানান, বর্তমানে পুটি ও চাদা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ মাছগুলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি কিনছেন তারা। চার মণ মাছ শুকালে এক মণ শুটকি মাছ পাওয়া যায়। সৈয়দপুরের মোকামে শুটকি পুটি ও চাদা মাছ আকার ভেদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত লোকসানে রয়েছেন তিনি। মাছ সংকটের কারণে অনেকে এখনো ব্যবসা শুরুই করেননি। মান্নান নগর এলাকার আরেক শুটকি ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন জানান, বিলে মাছ নেই। চায়না-সহ অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিল থেকে অধিকাংশ মা মাছ ধরে নেওয়া হয়েছে। ফলে কমেছে পোনা উৎপাদন। তাই মাছ সংকট এত তীব্র হয়েছে। এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো মশগুল আজাদ বলেন, এ বছর বর্ষা ও বৃষ্টির পানি কম হওয়ায় বিলের খোলা জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা মাছের পরিমান কম হয়েছে। তবে পুকুরে চাষকৃত মাছের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে আশা করছি।