সদরসিরাজগঞ্জ

জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জনের প্রেস ব্রিফিং

বিশেষ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের  সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন ২০২৩ উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। গতকাল ০৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, দুপুরে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হল রুমে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং সভায় সভাপতিত্ব করেন সিভির সার্জন ডা. রামপদ রায়।  প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওবায়দুল হাসান ও মেডিকেল অফিসার ডা. আবু ইউসুফ।

প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন,  জাতির জনক এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বির্নিমানের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একটি স্মার্ট দেশের জন্য প্রয়োজন স্মাট অফিস, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি সর্বোপরি স্মার্ট নাগরিক। সেজন্য ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হবে আজকের শিুশুরা। আগামীর সেই নাগরিক যারা আজকের শিশু তাদের অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে ও স্বাস্থ্যবান স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে প্রয়োজন নিরোগ দেহে তাদের বেড়ে উঠতে সহায়তা প্রদান। এজন্যই জীবনের শুরুতেই এসব শিশু ও তাদের মায়েদের জন্য এ ক্যাম্পেইন।

সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় তার বক্তব্যে আরও বলেন প্রতি বছর দেশব্যাপী জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপিত হয়। এবছর আগামী ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনে একইসঙ্গে সিরাজগঞ্জে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬১ জন শিশুকে লাল ও নীল রং এর ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। 

তিনি জানান, ক্যাম্পেইনে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি করে নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল  ও ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। সিভিল সার্জন এসময় আরও বলেন, ক্যাম্পেইনে বয়স অনুযায়ী নীল ও লাল রঙের ভিটামিন  এ ক্যাপসুল খাওয়ানের পাশাপাশি পুষ্টি বার্তাও প্রচার করা হবে। তিনি জানান, জন্মের পর পরই নবজাতককে শালদুধসহ মায়ের দুধ খাওয়ানো। এবং এসময় পানি, মধু, চিনি বা মিসরির পানি ইত্যাদি না খাওয়ানো, শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ন হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমানমত ঘরে তৈরি সুষম খাবার প্রয়োজন। এছাড়া মা এবং শিশুর পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসুতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমানে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার ও পরিবারের রান্নায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার করার জরুরি ও গুরুত্বপূর্ন। ক্যাম্পেইনের সময় এসব পুষ্টি বার্তার প্রচারণাও পরিচালনা করা হবে।

প্রেস বিফিংয়ের সভাপতি সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় জানান, সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন সকাল ৮টা  থেকে  বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সময়ে জেলার ১৫টি স্থায়ী এবং ২হাজার ১১২ অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসহ মোট ২হাজার ১২৭টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ হাজার ৩৬১ জন ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের একটি  করে নীল  রঙের ভিটামিন  এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। একই সঙ্গে এদিন ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুদেও একটি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে সফল করার জন্য জেলায় প্রায় ৪ হাজার ২৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৭৩৮ জন মাঠকর্মী কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও ১ হাজার ৪১ জন প্রথম সারির তত্ত্বাবধায়ক টিকাদান কেন্দ্র সমূহ সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্ঠি প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পুষ্ঠিসেবা কার্যক্রমে সাবিক নিয়ন্ত্রণ করবে।

সিভিল সার্জন এবছর ভিটাভিন এ ক্যাম্পেইন কিছু পুষ্ঠি বার্তাও প্রচার করা হচ্ছে। এরমধ্যে জন্মের পর পরই (১ ঘন্টার মধ্যে) নবজাতককে শালদুধ খাওয়ান। জম্মের পর প্রথম ৬ ( ১৮০) শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো, শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমানমত ঘরে তৈরি ওষুধ খাবার খাওয়ানো, মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে ভিটামিন সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি এবং উদ্ভিদ খাবার যেমন হলুদ ফলমুল ও রঙিন শাকসবিজ খেতে উৎসাহিত করতে ও পরিবারের রান্নায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহারে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে।

এসময় সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের অতীতে আয়োজিত ক্যাম্পের কৃমিজনিত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, অতীতে  দেখা যেত সচেনতার অভাবে দেশে কৃমি রোগের জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন না করার কারণে ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানে টক্সিট হতো। এজন্য ক্যাম্পেইনে কৃমির ওষুধও খাওয়ানে হয়। যেকারণে অতীতের ক্যাপস্যুল খাওয়ালে সাময়িক সময়ের জন্য শিশু অসুবিধাবোধ করলেও এখন আর এরকম হয় না। কিন্ত এখনও কিছু ক্ষেত্রে কিছু গুজব ছড়ানো হয় । এজন্য তিনি লেখনির মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রচার করে মানুষকে সচেতন করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান সিভিল সার্জন।

এক প্রশ্নোত্তরে সিভিল সার্জন রমাপদ দাস বলেন, ৬টি উপজেলার তৃণমুলের চরবেশিষ্ট ১০০টি ওয়ার্ডে আগামী ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর এই চারদিন বিশেষ উদ্যোগে ক্যামসুল খাওয়ানো হবে। যেন কোন শিশুই এ ক্যাম্পেইন থেকে বাদ না যায়। এবং গর্ভবতী মায়ের কাছে সঠিক বার্তা পৌছে যায়।

সিভিল সার্জন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবছর সকলের সহযোগিতায় শতভাগ সফল হবে ক্যাম্পেইন। একই সঙ্গে তিনি অতীতে ক্যাম্পেইন সফল করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এবছরও সহযোগিতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অবহিতকরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র গণমাধ্যম কর্মী আব্দুল কুদ্দুছ, দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন এর নির্বাহী সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, বাংলা ভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হারুন অর রশিদ খান হাসান, কালের কন্ঠ পত্রিকার ইসরাইল হোসেন বাবু, দৈনিক যমুনা প্রবাহ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল মজিদ প্রমুখ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এখন টিভির রিফাত হাসান, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির দিলীপ গৌর, দৈনিক সিরাজগঞ্জ বার্তার আব্দুল হামিদ খান হীরা, দৈনিক আজকের জনবাণীর আহসান হাবীব মুন্না, ভোরের দর্পন এর আল আমিন, একাত্তর টিভির মাসুদ পারভেজ, বাংলাদেশ অবজারভার এর অশোক ব্যানার্জ্জী, ইত্তেফাক এর  মাহমুদুল হাসান মিঠু,  মোহনা টিভি প্রতিনিধি সোহেল রানা, কলম সৈনিক এর মহিরউদ্দিন, সংবাদ প্রতিদিন এর বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন ফিরোজ, ডিভিসির খালিদ হাসান হৃদয়, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি বদরুল আলম দুলাল, সোনালী সংবাদ রফিকুল ইসলাম, দেশ টিভির সায়েমসহ সিরাজগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীগন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button