কাজীপুরসিরাজগঞ্জ

কাজিপুরে আবারও বিজয়ের পথে তানভীর শাকিল জয়

আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১, কাজীপুর আসন। ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আসনটির পুর্নবিন্যাস করা হয়। বর্তমানে কাজিপুর ও সদরের আংশিক নিয়ে সিরাজগঞ্জ-০১ নির্বাচনী এলাকা। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী জয়ের ইতিহাস বিশ্লেষণে কাজীপুর আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ আসনে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ০৪ জন। এরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে তানভীর শাকিল জয়, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকে মো. জহুরুল ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর মশাল প্রতিকের মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম নোঙর প্রতিকের মো. সবুজ আলী।

অতীত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ৯৬ সালের মধ্যফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে হিসেবের বাইরে রাখলে নদী ভাঙা, যমুনার চরবেষ্টিত এই নির্বাচনী এলাকায় বিগত ৫২ বছওে বিভিন্ন সময়ের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৮ বার । স্বতন্ত্র প্রার্থী ০২ বার নির্বাচিত হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় নেতা শহিদ এম. এনসুর আলী। এ আসনে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত আমীর হোসেন ভুলু স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের নিকট পরাজিত হন। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ওই বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। ১৯৯১, ১৯৯৬ এর জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও উপনির্বাচন, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮, ২০২০ উপনির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ড. মোহাম্মদ সেলিম ও বর্তমান এমপি তানভির শাকিল জয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।

অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে কাজীপুর নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ ব্যতিত অংশ নেয় বিএনপি, জাসদ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, সিপিবি, জামায়াত ইসলাম প্রভৃতি রাজনৈতিক দল। এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি, জামায়াত, সিপিবি। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টি, বিএনএম। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ ব্যতিত জাসদ ও জাতীয় পার্টির কোন শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো নেই এলাকায়। এলাকার নির্বাচনী রাজনীতিতে কাগজে কলমে থাকলেও কিংস পার্টি খ্যাত বিএনএম এর কোন সাংগঠনিক তৎপরতা কারো চোখে পড়েনি নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার আগে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল এরশাদ ৮২ এর মার্চ মাসে বন্দুকের নলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ক্ষমতায় থেকে জন্ম দেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। দলটি ক্ষমতায় থাকাকালিন ৮৬ ও ৮৮ সালে দুবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কাজীপুর আসনে ৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিমের বিরুদ্ধে।  ৮৮ সালে আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচনেও দলটি কাজীপুর থেকে নির্বাচিত হতে পারে নাই। ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। ৯০ এর আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির একাধিক ভাঙন ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিতর্কিত ভুমিকার কারণে আগের জৌলুস হারিয়ে  দলটি ক্ষয়িষ্ণু প্রায়। তদুপরি কাজিপুরে দলটি কোন রাজনৈতিক তৎপরতার জনমনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে এদলের মনোনীত প্রার্থী লাঙল প্রতীক নিয়ে নিজের সাধ্যমতো নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করছে। মাইকিং, পোষ্টার,গনসংযোগের মধ্যদিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে।

নির্বাচনের অন্য দল জাসদ। দলটি স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা প্রত্যয় নিয়ে সিদ্দিক মাষ্টারের লাশকে সামনে নিয়ে পথ চলতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর দলটি দেশের তরুন সমাজকে আকৃষ্ট করে সমাজ বিপ্লবে। বিগত ৫২ বছরে দলটি নানা সময়ে ভাঙন, ৯০ দশকে বিশ^রাজনীতির পটপরিবর্তনে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু এই রাজনৈতিক দলের একটি অংশ জাসদ-ইনু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলটি ১৪ দলের অন্যতম শরীক দল। দলটির প্রধান নৌকা প্রতীক নিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কুষ্টিয়া থেকে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কাজীপুরসহ দেশের অন্যত্র দলের প্রতিনিধিরা মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে।

কাজীপুর নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনতার পর এ আসনের নির্বাচিত জাতীয় নেতা শহিদ এম. মনসুর আলীর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিত্বের সামনে তেমন কোন মজবুত সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি দলটি। এমুহুতে দলটি নানাভাগে বিভক্ত। অতীত রাজনৈতিক মূল্যায়ণ ও ৭২ এর রাজনৈতিক আদর্শ থেকে দূরবর্তী অবস্থানে ক্রমশ দুর্বল দল জাসদের মশাল প্রতীকে নির্বাচন করছেন প্রাক্তন সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম। প্রাক্তন সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার অনুসন্ধানে গঠিত গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এর মশাল এর প্রচারণা চলছে সীমিত পরিসরে। কিন্ত নির্বাচনী রাজনীতিতে নবাগত, দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোর দল নিয়ে কাজীপুরের নির্বাচনী যুদ্ধে তেমন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি জাসদ প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলে স্থানীয় অনেকের ধারনা। আরেক প্রার্থী কিংস পার্টি খ্যাত বিএনএম প্রার্থী এলাকায় অপরিচিত। নির্বাচনী এলাকায় বিএনএম এর কোন সাংগঠনিক কাঠামো আছে বলে কেউ বলতে পারেনি। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এ প্রার্থীর পোষ্টারসহ কোন নির্বাচনী প্রচারণার কথা বলতে পারেনি অনেকেই।

অন্যদিকে জানুয়ারির ৭ তারিখের নির্বাচনকে সামনে সামনে রেখে দিনরাত নির্বাচনী প্রচারে, মিটিং, মিছিল ও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নৌকা প্রতীকের শহিদ এম. মনসুর আলীর পৌত্র, প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম পুত্র বর্তমান এমপি তানভীর শাকিল জয়। তানভীর জয়ের পাশে থেকে নির্বাচনী প্রচারে কাজ করছন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক শুভাকাঙ্খি, শহিদ এম. মনসুর আলী  ও প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম অনুসারীরা। জয়ের বিষয়ে শতভ্গা আশাবাদী নাসিম পুত্র তানভীর শাকিল জয়।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য প্রার্থীরা প্রত্যেকেই যার যার সাধ্যমতো নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাসদ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে কার্যত কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে উঠছে না- এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় অনেকে।

অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াত, বাসদ, সিপিবি কোন প্রার্থী।  এমনতর নির্বাচনী পরিবেশে আগামী ৭ জানুয়ারি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহিদ এম. মনসুর আলীর পৌত্র প্রয়াত কেন্দ্রীয় আওয়ামী নেতা মোহাম্মদ নাসিম পুত্র তানভীর শাকিল জয়ই শেষ হাসি হাসবে ।

সবকিছু মিলিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে  আবারও কাজীপুরে শহিদ এম. মনসুর আলী- মোহাম্মদ নাসিমের উত্তরাধিকারই হতে যাচেছ কাজীপুরে নৌকার মাঝি। নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় এর বিজয়ী ঘোষণা সময়ের অপেক্ষামাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button