চৌহালীসিরাজগঞ্জ

দীর্ঘ নয় বছর ধরে চৌহালী ৩১ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তর্বিভাগ বন্ধ, রোগীরা বিপাকে

ইদ্রিস আলী, চৌহালী প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত প্রায় নয় বছর ধরে অন্তর্বিভাগ সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধু মাত্র বহির্বিভাগে কিছু রোগীকে পরীক্ষা ও ঔষধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এই হাসপাতালটিতে। এতে করে নদী ভাঙন কবলিত এই উপজেলার মানুষ সরকারি এই হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আশপাশের বিকল্প কোন আবাসিক হাসপাতাল না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার হাজারো মানুষ ।

চৌহালী উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চৌহালী উপজেলার আয়তন ২১০ বর্গ কিলোমিটার, মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৩ জন, ইউনিয়ন সাতটি,ওয়ার্ড-২১টি,গ্রাম ১৭৭টি। এক সময় উপজেলার পশ্চিম খাষকাউলিয়া এলাকায় ৩১ শয্যার চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সম্পূর্ণ রূপে স্বচল ছিল। হঠাৎ ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর হাসপাতাল ভবন যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পর থেকে চৌহালীর স্বাস্থ্য সেবায় নেমে আসে চরম বিপর্যয়। তবে খাষকাউলিয়া সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে একটি টিনশেট ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শুধুমাত্র বাহির বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। অন্তঃবিভাগ চালু না থাকায় রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

গত সোমবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য রোগী সেবার জন্য হাসপাতালে এসে ভিড় করছেন।তাদের লাইনে দাঁড় করে শুধুমাত্র বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এখানে উপজেলার খাষকাউলিয়া পূর্ব পাড়া গ্রামের আসরাফ আলী তার স্ত্রী আলেয়া বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। আসরাফ আলী বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে আমার স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছে। আজ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছি।এখানে পরীক্ষা করে চিকিৎসক বললেন ডেঙ্গু হয়েছে।

দ্রুত চিকিত্সার জন্য অন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।   

পশ্চিম কোদালিয়া গ্রামের হালিমা বেগম তাঁর অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছেন। এখানে আবাসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে দ্রুত ৪০ কিলোমিটার দুরে টাঙ্গাইল জেলা শহরে কোন হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন তিনি । হালিমা বেগম বলেন, এই হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই আমাদের টাঙ্গাইলে যাইতে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য চরম সমস্যা।

হাসপাতাল সূত্রে সজানা যায়, যমুনায় বিলীন হবার পর হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে যন্ত্রটি পার্শ^বর্তী শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি থাকলেও দক্ষ জনবল নেই। এছাড়া খুরিয়ে খুরিয়ে চলছে  হাসপাতালটির  ইসিজিসহ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো পড়ে আছে। অপরটি প্রায়ই নষ্ট থাকে। একমাত্র জেনারেটরও নষ্ট থাকে অধিকাংশ সময়। টিনসেড ভবনে গুটিয়ে  রাখা ওয়ার্ডগুলোর সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে কর্মচারীদের কাজে। বেডগুলো ঘুমানোর জন্য ব্যবহার করছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, অফিস সহায়ক ও অন্য কর্মচারীরা।

চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে  এই হাসপাতালটিতে প্রথম শ্রেণীর  আট জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৩১ জন তৃতীয় শ্রেণীর ১৮ জন ও চতুর্থ শ্রেণীর সাত জন কর্মকর্তা কর্মচারী সহ মোট ৬৪ জন এখানে কর্মরত রয়েছেন।

হাসপাতালটির জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন বলেন, আমাদের আবাসিক রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সহায়তা করে থাকি। প্যাথলজিক্যাল সেবা কার্যক্রমেও সহায়তা করছি।

ওয়ার্ডবয় (অফিস সহকারী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) সোহেল রানা বলেন, হাসপাতালে অন্তঃবিভাগ বন্ধ থাকায় এখানে ওয়ার্ডবয় হিসেবে আমার কোন কাজ না থাকায় অফিস সহকারী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি।

হাসপাতালটির উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম মামুন বলেন, নদী ভাঙনের সময় ৩১ শয্যা হাসপাতালের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র কিছু ব্যবহার হচ্ছে, আর কিছু যন্ত্রপাতি অগোছালো ভাবে এখানকার একটি কক্ষে জমা করে রাখা হয়েছে। যে গুলো জায়গার অভাবে কখনো বের করা সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের পরিসখ্যানবিদ আবু ইউসুফ বলেন, দক্ষ জনবল না থাকলেও বর্তমানে রোগীদের চাপে আমাদের নার্সদের সহায়তায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হচ্ছে। 

চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাস্তান রেজা বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় ভবন সমস্যার কারণে  হাসপাতালে আবাসিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারনে এখানকার অতিরিক্ত কর্মীদের বহিরবিভাগে সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।   সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন রমাপদ রায় প্রথম  আলোকে বলেন, যেহেতু এটি একটি নদী ভাঙন এলাকা তাই বিকল্প যে কোন বিকল্প ব্যাবস্থাতেই এখানে হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগ জরুরী ভিত্তিতে চালু করা প্রয়োজন। অতি সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button