এনডিপি বাস্তবায়িত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প(আরএমটিপি)-র উপ-প্রকল্প -‘‘নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পন্যের বাজার উন্নয়ন’’ এর আওতায় পলিসি উন্নয়ন ও বিদ্যমান পলিসির প্রয়োগ বিষয়ক মাল্টিষ্টেকহোল্ডার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আনোয়ারুল হক। এছাড়াও সভায় সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও গ্যাপ মাষ্টার ট্রেইনার ডা. নুর নবী, উপ-পরিচালক, জেলা কৃত্তিম প্রজনন ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
ইফাদ ও পিকেএসএফ-র আর্থিক সহযোগিতায় বাস্তবায়িত আরএমটিপি প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ মন্ডল। সভায় সাইলেজ উদ্যোক্তা, দুগ্ধজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকারী, ভার্মি কম্পোষ্ট উদ্যোক্তা, ফিড কোম্পানী, দুধ ব্যবসায়ী, গোয়ালা, মিট প্রসেসিং ও স্লটার হাউজ উদ্যোক্তা, ঘোল মাঠা উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা ইত্যাদী অংশগ্রহনকারী কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা মহোদয় বলেন, রেডি ফিডের দাম অত্যাধীক বেড়ে যাওয়ায় তারা গবাদি পালন করে আয়ের চেয়ে তাদের ব্যয় হচ্ছে বেশী কারন উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় অনেক খামারি গবাদি পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এই সমস্যা উত্তোরনের জন্য খামারিদের স্থানীয় খাবার যেমন সাইলেজ খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে সবাইকে পরামর্শ প্রদান করেন।গবাদিপ্রানি উন্নয়নে এলএসপি-গন যে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তার জন্য তিনি সবার প্রতি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি এনডিপি আরএমটিপি প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যবসা উন্নয়নে অপরিশীম অবদান রাখায় এনডিপি-র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মুক্ত আলোচনায় মো. রাশেদুল ইসলাম, স্মার্ট এগ্রো পার্ক। কিছু চ্যালেঞ্জ উল্যেখ করেন যেমন-কাচাঁমালের অভাব- বিশেষ করে শীতের মৌসুমে গ্রামে গোবর জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করে এবং শ্রমিক সংকট- ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকরা সাধারণত বেশী মজুরীতে কাজ করে থাকে।আরপি এগ্রো সাইলেজ উদ্যোক্তা মো. রুবেল হোসেন বলেন, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভুট্রা এবং স্মার্ট নেপিয়ার ঘাসের সংকট। সাইলেজ কালচার বিষয়ে আলোচনা ডিএলএস এর পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রাপ্তির বিষয়ে আবেদন করেন। রুবেল- সাইলেজ কালচার বিষয়ে আলোচনা ডিএলএস এর পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রাপ্তির বিষয়ে আবেদন করেন। ডিএলও মহোদয় এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। কিউসি ল্যাবে সাইলেজ টেষ্ট করে তার কপি ডিএলও বরাবর জমা দেয়ার জন্য বলা হয়।
সলপ ঘোল এর উদ্যোক্তা আ. মালেক ঘোলের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে সহযোগীতা কামনা করেন। আফসার- স্লটার হাউজ এর লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন জানান, ডিএলও মহোদয় মিটপ্রসেসিং-এর মতো প্রক্রিয়া অনুসরন করে একইভাবে আবেদন করার পরামর্শ দেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই লাইসেন্স নিশ্চিতের বিষয়ে আশ^স্ত করেন।
ভেটেনারি ল্যাব যদি কেউ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে বাংলাদেশ ভেটেনিয়ারি কাউন্সিল থেকে লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে। তমিজ উদ্দিন- পানি মেশানো বা দুধ ভেজাল রোধ করার বিষয়ে প্রানি সম্পদ বিভাগের সহযোগীতা কামনা করেন।
ডা. তোফাজ্জল হোসেন জানান প্রতিমাসেই মোবাইল কোর্ট আয়োজন করা হয়। ঐসকল ভেজাল কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত তাদেও তথ্য দেন আমরা প্রসাশনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্টের আয়োজন করব। আরএমটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে সেন্ট্রাল দুধ কালেকশন পয়েন্ট উন্নয়ন করা হচ্ছে উপস্থিত বনলতা ও তমিজ উদ্দিন সুইটস এর স্বত্বাধীকারিকে ঐসকল উদ্যোক্তাদের কালেকশন পয়েন্ট থেকে দুধ সংগ্রহের অনুরোধ জানান। তারা এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করায় আরএমটিপি প্রকল্পকে ধন্যবাদ জানান। বনলতা- আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্ধের বিষয়ে ডিএলএস-ও সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএম আনোয়ারুল হক জানান, যারা ডেইরী পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত তারা যৌথভাবে জেলা প্রসাশক মহোদয়ের নিকট আবেদন করার পরামর্শ এবং ডিএলএস-ও পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রদানের আশ^াশ প্রদান। সরকারের উদ্যেশ্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এই এপ্রোসে কাজ করা। আপনাদের উদ্যোগ গুলো সম্প্রসারণের বিষয়ে সহযোগিতা করার বিষয়ে প্রানিসম্পদ বিভাগ সর্বাত্বকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
গ্যাপ মাষ্টার ট্রেইনার ডা. নুরনবীবলেন- বড় বড় উদ্যোক্তাদের নিজে গরুর খামার করার বিষয়ে পরামর্শ দেন। অতিত এবং বর্তমান আগের খামার এবংব র্তমান খামার , দেশী গরু নাই বললেই চলে । আমাদেও এলাকায় এমন কোন বাড়ি নাই যে গ্রামে ৫ টা ১০ টা খামার নাই। গরু খোজাকরণ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল যাতে ষাড় না থাকে ফলে কৃত্তিম প্রযনন করে। ভ্যাকসিন কেউ নিতে চাইত না, আর এখন খামারিরাই ভ্যাকসিনের জন্য খামারিরাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। বাছুর উৎপাদন ভালো বাছুর না হলে পরবর্তী জাত উন্নয়ন হবে না। ন্যাপিয়ার ঘাস দিয়ে সাইলেজ করার পরামর্শ দেন, কারণ ভুট্রা সব সময় পাওয়া যায় না।ডিএলও-কাওয়াখোলা মহিষের বাথান থেকে ডেইরী উদ্যোক্তাদের দুধ সংগ্রহের বিষয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কারণ মহিষের দুধে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট বিদ্যমান রয়েছে। ঘি উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা শামীমা সেতু বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় কোন সমস্যা নাই, অনলাইনে বিক্রি – ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
এনডিপি ফিড এর মো. মোতাহার হোসেন, ফিডের স্যাম্পল শো করেন , ডিএলও স্যার ফিড মিলের প্রতি তার পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।কনসালটেন্ট ডাঃ নেয়ামুল করিম উনার তত্তাবধানে ফিড উৎপাদন হচ্ছে যা গুনগতমানে বাজাওে বিদ্যমান কোম্পানীর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সহকারি প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা জানান- দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন-দুধ খাটি হলে ঘি খাটি হবে।
গরু খাবারের বিষয়ে যত্নবান হলে ভালো দুধ পাওয়া যাবে। সাফিনা সাইলেজ, সজিনার পাতা ও কালোজিরা উপকারি এন্টিবায়োটিক উপাদান, দানাদার খাবারের উচ্চ মুল্যের কারণে আমাদেও সাইলেজ খাওয়ানোর বিষয়ে খামারিদেও পরামর্শ দিতে হবে। ২০১০ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে যদি বানিজ্যিক ভাবে সাইলেজ উৎপাদন করতে চায়। মাংস প্রক্রিয়া করার ক্ষেত্রে ২০২১ নীতিমালা যারা কাজ করবে তাদের সিভিলসার্জন অফিস থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা অনুসরন করতে হবে। ডাঃ মোঃ তোফাজ্জল হোসেন- এই ওয়ার্কশপ টা খুবই জরুরী লিংকেজ স্থাপনের একটা ক্ষেত্র। আমরা আসলে একেবারে দুধ উৎপাদন বা প্রক্রিয়া, বাইপ্রোডাক্ট, গবাদি খাদ্য সংকটের বিষয়ে ঘাস উৎপাদন বাড়াতে হবে। ঘাসের অপচয় ডাটা পড়ে থাকে আমাদের খামারিদের সচেতনতার অভাব এখানে কাজ করতে হবে।খামার যান্ত্রিকীকরণ এর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। ডিএলও মহোদয় বলেন, মাংস সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। সাধারনত মানুষ ফ্রিজের মাংস খেতে চায় না। এসব ক্ষেত্রে ও আমাদের নিরাপদ মাংসের বিষয়ে কাজ করতে হবে।রোড সাইডে ন্যাপিয়ার ঘাসের চাষ করার বিষয়ে খামারিদের উৎসাহিত করতে হবে। প্রচুর কাটিং ডিএলএসর নিকট সচরাচর আছে। সবার জায়গা থেকে সবাই আমরা সহযোগিতা করব। রেগুলটরি কাজ গুলো আমার দপ্তর থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। ডিজি স্যার লাইসেন্স দিবে। যদি কোন কাজ নিয়মতান্ত্রিক হয় অবশ্যই সাথে সাথে আমাদের সহযোগিতার দেওয়া যাবে। কোন কাজে যাতে দীর্যসুত্রিতা না হয় সে দিকে খেয়াল রাখব। শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্ধও বিষয়ে সিরাজগঞ্জের ডেইরী শিল্পের ব্যানারে তার কাছে যেতে হবে। এ শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদেও সম্মেলিতভাবে তাদেও উদ্যোগ নিতে হবে। বড় বড় উদ্যোক্তাদের নিজে খামার করা এবং যান্ত্রিকীকরনের বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে। গোবর এর সঠিক ব্যবহারের জন্য ভার্মি কম্পোষ্ট, সরকারি জায়গায় ঘাস লাগানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন। বিশ^ এন্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে এন্টিবায়োটিকের ভূল ব্যবহার সম্পর্কে আলোচন করেন। পারতঃপক্ষে এন্টিবায়োটিক এড়িয়ে চলতে হবে যদি ব্যবহার করতে হয় তাহলে তার কোর্স কম্পিøট করতে হবে। সেসসিভিটি টেস্ট করে তারপর এন্টিবায়োটিক খেতে হবে বা খাওয়াতে হবে। উপস্থিত সকল অংশগ্রহনকারীদের প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপন করে ও সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে কার্যক্রম সমাপÍ ঘোষনা করেন।