উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা ইফাদ ও পিকেএসএফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এনডিপি কর্তৃক বাস্তবায়িত রুরাল মাইক্রোএন্টার প্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট-আরএমটিপি-ও উপ-প্রকল্প “নিরাপদ মাংস ও দূগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন” এর আওতায় মাংস প্রক্রিয়াকারী ও দূগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের গুনগতমান উন্নয়ন, বৈচিত্রায়ন ও বাজার উন্নয়নে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য যেমন- ঘি, মাঠা, দই ও মিষ্টি পণ্যের বৈচিত্রায়ন, ফর্টিফিকেশন, পণ্যের আয়ুস্কাল বৃদ্ধি ও সংরক্ষনের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আশিকুল ইসলাম তার নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দূগ্ধজাত পণ্য সলপের মাঠার উপর তার গবেষনা কার্যক্রমের ট্রায়ালের জন্য পণ্যে কালচার প্রদান করে গুনগত মান ঠিক রেখে পণ্যের আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করেছেন। কোন ফ্রজেন ব্যবস্থা ছাড়াই সাধারন তাপমাত্রায় উক্ত পণ্য ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। ফলে আরএমটিপি প্রকল্পের উদ্দোক্তা উৎপাদিত পণ্য ঘোল মাঠা দেশের দুরদুরান্তে বাজারজাত করনে সহজ হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা থাকলেও তার পণ্য বাজারজাতকরনে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না বলে জানান উদ্যোক্তা আব্দুল মালেক। তিনি জানান, “এই প্রকল্প আমার ব্যবসায় সফলতার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে, আসলে এই ধরনের চিন্তা চেতনা পূর্বে আমাদের মাথায় ছিল না, আমরা ধরেই নিতাম হরতাল অবোরধ হলে পরিবহন যেমন বন্ধ থাকে সেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ থাকত। বাজারজাতকরণে কাঁচা পণ্য হিসাবে বহুবার আমরা এর আগে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি।
২০২২ সালে আরএমটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে তার উৎপাদিত দূগ্ধজাত পণ্য ঘি এবং মাঠার বিএসটিআই সনদায়ন করা হয়। শুধু তাই নয় আইএসও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করানো হয় এবং কারখানার উন্নয়নযোগ্য কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য তারা সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে কারখানার পরিবেশ, কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রটোকল বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরন করে উদ্যোক্তা আব্দুল মালেক তার কারখানার সুস্থ পরিবেশ ও দুগ্ধজাত পণ্যের (মাঠা) গুনগতমান বজায় রেখে উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রাখায় তাকে আইএসও সনদ প্রদান করা হয়। উৎপাদিত দূগ্ধজাত পণ্যের সনদায়নের মাধ্যমে ব্যান্ড উন্নয়নের ফলে প্রিমিয়াম বাজারে উৎপাদিত পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে এবং মূল্য সংযোজন ঘটায় তা উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে। প্রকল্পের ফ্যাসিলিটেশনের মাধ্যমে বৈচিত্রায়নকৃত চকলেট, ষ্টবেরী আর ভ্যানিলা ফ্লেভারের মাঠা বাচ্চাদের এখন পছন্দের শীর্ষে। বিএসটিআই ও আইএসও সনদায়নের ফলে তার দূগ্ধজাত পণ্যের ব্রান্ডের মান উন্নয়ন হয়েছে এবং বর্তমানে তার উৎপাদিত দূগ্ধজাত পণ্য (দই ঘি মাঠা ও মিষ্টান্ন) এর আইএসও সনদ থাকায় বাজারজাতকরণে কোন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হয় না।
সলপের ঘোল মাঠা এখন শুধু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা চট্রগ্রাম সিলেটসহ প্রায় আরো ১২-১৪ টি জেলা শহরে তার পণ্য বাজারজাত হচ্ছে। ১৫ টি ট্যাংকার ভ্যানের মাধ্যমে শহরের গলিতে, স্কুলের সামনে, পার্কে ও বিভিন্ন জনসমাগমপূর্ন স্থানে তার মাঠা বিক্রি হচ্ছে। যদিও শীতকালে ঘোল মাঠা বেশী চলে না তবে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আবার এ সময়টায় বেশী হয় ফলে দই-র চাহিদা অনেক বেশী থাকে। এক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক যে গোয়ালা ও খামারি তাকে দুধ সরবারাহ করে থাকে তাদের দুধ কখনো অন্য জায়গায় বিক্রির প্রয়োজন হয় না। তবে রোজার মাসে চুক্তিভিত্তিক খামারিদের দুধে চাহিদা সংকুলান না হওয়ায় বাইরে থেকে তাকে দুধ সংগ্রহ করতে হয়। শীতের সময় প্রতিদিন ৩০-৩৫ মন এবং গরমকালে ১০০-১২০ মন এছাড়া রোজার মাসে ৩০০ -৩৫০ মন দুধ সংগ্রহ করে থাকে। এ সময় স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত দুধে সংকুলান না হওয়ায় বাইরের এলাকা যেমন সাঁথিয়া, বাঘাবাড়ি, বেলকুচি ও শাহজাদপুর থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে।
উদ্যোক্তা আব্দুল মালেক তার উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্রায়ন, ফর্টিফিকেশন এবং বিএসটিআই ও সর্ব শেষ আইএসও সনদপ্রাপ্ত হওয়ায় একদিকে যেমন পণ্যের গুনগতমান ও ব্রান্ড উন্নয়ন হয়েছে অন্যদিকে দেশের বড় বাজারে প্রবেশিধীকার বেড়েছে ফলে তার পণ্যের ৩৫% বিক্রয় বৃদ্ধি এবং প্রায় ২৫% লাভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তার স্বপ্ন, শতবছরের ঐতিহ্য বহনকারী দূগ্ধজাত পণ্য সলপের ঘোল-মাঠা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভের জন্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।