মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত এমন সব সংবাদ পাই। যে সব সংবাদ শুনে মনটা ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। রাতে বাসায় ফিরে ঢাকা থেকে তপুর মোবাইলে এমনই একটি সংবাদে মনটা হয়ে গেল ক্ষত-বিক্ষত। তপু জানাল কামরুল ভাই আর নেই।
মনকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। কথা শেষে আবার ফোন ব্যাক করলাম। বললাম কি বললে? সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী পৃথিবী থেকে চলে গেছে? ও বলল হা ভাই এখন তার মরদেহ সোনাইমুড়ীর পথে।
মুহুর্তে মনটা ফিরে গেল ৩৭ বছর আগে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে। ওই ক্যাম্পাসে এরশাদ সামরিক স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে পরিচয় কামরুল ইসলাম চৌধুরী এর সঙ্গে। পডত আমার ছোট বোনের সঙ্গে অর্থনীতি বিভাগে। ক্লাসের ফাঁকে মাঝে মাঝে এসে বসত ডাকসুতে। কথায় কথায় সম্পর্ক মজবুত হয়। কামরুল সক্রিয় হয়ে ওঠে আমাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগে। সামরিক স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের মিছিলে হয় নিয়মিত উপস্থিতি। এক সময়ে ক্যাম্পাসে ও হয়ে ওঠে আমার সব সময়ে ছায়ার মত সঙ্গি।
বিশ^বিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে ও যুক্ত হলো সংবাদপত্রের সঙ্গে। লিখতে শুরু করে ইত্তেফাকের পাতায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে। এক সময়ের রাজপথের কামরুলের জীবিকা হয়ে উঠল কলম সৈনিকের পেশা। সময়টা ছিল ৮৬।
তারপর অনেক দিন। অনেক বছর। এদীর্ঘ সময়ের মধ্যে রাজনীতি ছেড়েছি। ঢাকা ছেড়েছি। মফস্বল শহরে স্থিতু হয়ে হয়েছি। পেশা আর অবস্থানের কারণে ঢাকার পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে।
ফেসবুকের কারণে কামরুলের সঙ্গে পুন যোগাযোগ স্থাপিত হলো। তাও আবার মাঝে মাঝে হারিয়ে যেত। সবশেষে ওর সঙ্গে কথা হয় জাতীয় প্রেসক্লাব এর মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক এর স্মরণ সভায়। সেই চিরচেনা হাসি দিয়ে শুরু করল কথা।
এসময়েই জেনেছি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। অনেক দূর এগিয়ে গেছে। জানলাম কামরুল পরিবেশ সাংবাদিক হিসেবে দেশের ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার নেতা। এছাড়াও এক সময়ে সে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছে।
সবই ভালোই চলছিল। সব শেষে গত মঙ্গলবার রাতে কামরুল চলে গেল অনন্তের পথে।
এসময়ে কামরুলের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াকে কিছুতেই মন মেনে নিতে পারছে না। তারপরও কামরুল চলে গেছে এটাই সত্য।
তাইতো বলতেই হচ্ছে ভালো থেকো কামরুল। ওপারে শান্তিতে থেক।