বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন ফিরোজী: নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন,নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌছাইতাম। বলে ছিলে তুমি চিঠি দিও মোরে- সেই গানের কলি বাস্তবে রূপ নিয়ে অতীত দিনে যোগাযোগের অন্যতম প্রধানতম মাধ্যম ডাক বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় এখন ঝিমিয়ে পড়েছে।
এখন আর সকাল থেকে ডাকে না ডাক হরকরা, আসে না চিঠি-যার ভেতরে লুকিয়ে থাকত অনেক অনুভূতির অনুকরণ, আনন্দের কোলাহল কিংবা চক্ষু ভেজা জলে হতাশার চাপা দীর্ঘশ্বাস। অতীতে এই চিঠি বয়ে আনত কারও শেষ বিদায়ের কান্নাভেজা খবর। আবার কষনও কারও অপেক্ষামান মায়ের কাছে বয়ে আনত সন্তানের লেখা সু-খবরের বার্তা। যার নাম পোস্ট কার্ড,ইনভেলাপ (খাম)। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা যখন অভ্যস্ত ছিলাম না তখন এই চিঠিই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত।
আজকাল শহর-বন্দর- গ্রামে-গঞ্জের সর্বত্র প্রযুক্তির প্রভাবে চাপা পড়েছে চিঠির অধ্যায়। শুধু সরকারি নথিপত্র পাঠানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে ডাক বিভাগে। একটা সময় ছিল এটা সম্ভবত বাংলাদেশে শেষ দেখা গেছে নব্বইর দশকে। অফিসের খাকি পোশাকের পিয়ন দরজায় কড়া নেড়ে যখন উচ্চস্বরে হাক দিত চিঠি। ডাক পিওনের এই ডাক শুনে কে আগে চিঠি নেবে এই ভেবে ঘরের শিশুদের শুরু হয়ে যেত দৌড় প্রতিযোগিতা। এরকম গল্পও শোনা যায়।
আধুনিক ডাক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে পৌনে দুইশ বছর ধরে রচিত হয়েছে মানুষের অগ্রযাত্রার ইতিহাস। সভ্যতার বিকাশের একটি পর্যায় থেকেই চিঠির মাধ্যমে উঠে এসেছে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিহাস। সৃষ্টিশীলতার বিকাশও ঘটতে দেখা গেছে চিঠির মধ্য দিয়ে।
একটা সময় চিঠি ছিল তারুণ্যের উচ্ছাসে হৃদয়ের আবেগের এক মধুময় পাঠশালা। আবেগমাখা সেই চিঠি লেখার অভ্যাস মানুষের মাঝ থেকে হারিয়েই যাচ্ছে। চিঠি লেখার প্রবণতা কমে আসায়, এর ভাষার নান্দনিকতা, শিল্পতা হারিয়ে যাচ্ছে। ডাক বিভাগের ডাকপিয়ন হলুদ খামেভরা গুপ্ত কথার ঝুলি নিয়ে ঘুরে ঘুরে যে চিঠি বিলি করত সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। সকাল থেকে হাঁকে না হরকরা-চিঠির ঝুলি নিয়ে ঘরে দরজার কড়া নাড়ে না রানার। জানা যায়, গত পাঁচ বছরে ডাক বিভাগকে লোকসান গুনতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাক বিভাগের দিকে সরকারি নজরদারি না বাড়ালে সামনে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।
সিরাজগঞ্জ প্রধান পোষ্ট অফিসের সহকারি মাষ্টার আশরাফুল ইসলাম জানান, কোষ্ট কার্ড, খাম আগের মতো আর সাপ্লাই নেই। সিরাজগঞ্জ পোষ্ট অফিস পরিদর্শক কামরুজ্জামান জানান,জেলায় পোষ্ট অফিস সংখ্যা মোট ১৯৯ টি।
সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল কাম পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল লতিফ জানান,এফ ডি,এস বি, সঞ্চয়পত্র সবগুলো পারিবারিক সঞ্চয়পত্র জিইপি পোষ্ট অফিসে চালু আছে। অফিস, আদালতের চিঠিপত্র ছাড়া ব্যাক্তিগত চিঠিপত্রের সংখ্যা অনেক কম। কর্মচারির সল্পতাও আছে। রেজি., জিপি পার্শেল, ইসু এবং বিলি, সঞ্চয়পত্রের কাজ অনলাইনে হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে পোষ্ট অফিসের গতি কিছুটা অব্যহত থাকলেও আগের মত নেই।
স্নেহের দুল্লা গ্যাদা,দোয়া নিস হুনলাম-অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ফ্যাক্স, ই-মেইল, মেইল, মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা, ফেজবুক, স্কাইপেতে ভিডিও চ্যাটসহ ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিতে কালের যাত্রার হেই চিঠি ও ডাকবাক্সু, ডাকঘর আরায়া যাইত্যাছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চিঠি পত্র আদান প্রদান কইমা যাওয়ায় দিন দিন রাজস্ব আয়ও কইমা যাইত্যাছে।এগুলা কি হাচা কথা নাহি- ভালো থাকিস। ইতি তোর বড় মামু।
এমনিভাবে অতীতের সেই পোষ্ট কার্ড,ইনভেলাপে লেখা চিঠি আজ তথ্য প্রযুক্তির আগমনে হারিয়ে যাচ্ছে। চিঠি, পিওন, রানার, চিঠির খোলা বাক্সÍ আগামী প্রজন্মের কাছে অচেনা আর ডাকবিভাগের স্থান হবে বইয়ের পাতায় বলে সচেতন মহল মনে করেন।