অশোক ব্যানার্জী : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পোতাজিয়ায় ঘোষদের দূর্গা পুজা জেলার অন্যতম প্রাচীন দূর্গা পুজা। যা এই অঞ্চলে বড়বাড়ীর পূজা নামে পরিচিত। তবে প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙ্গে ভগ্নদশায় পরিণত হলে কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুন মন্দির নির্মান করছেন। এবছর নবনির্মিত মন্দিরেই দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এক সময় বিশাল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হত জেলার বনেদী ও ঐতিহ্যবাহী এই পূজা। কিন্ত কালের প্রবাহে সেই পূজার জৌলুস আজ আর নেই। তবে প্রায় দেড়শো বছর ধরে এই পূজা বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারগণ এখনও আয়োজন করছেন। ঘোষদের বর্তমান বংশধর বারিদ বরন ঘোষ (৮২)। বারিদ বরন ঘোষের ঠাকুর দাদা গৌর লাল ঘোষ।
ইতিহাস লেখক রাধা রমন ঘোষের লেখা পাবনা জেলার ইতিহাসে শাহজাদপুরের পোতাজিয়ার গৌরলাল ঘোষের পরিচয় পাওয়া যায়। যিনি ইতিহাসে হাজারী লাল ঘোষ নামে পরিচিত। সেই সময়ে হাজার হাজার গুরু ছিল বলেই গৌর লাল ঘোষ হাজারী লাল ঘোষ নামে পরিচিত পান। মূলত তার সময়েই ঘোষ বাড়ীতে জাকজমকপূর্ণভাবে দূর্গাপূজার গোড়াপত্তন হয় বলে ধারণা করা হয়।
এছাড়া এই বনেদী পরিবারের সদস্য প্রাণবল্বভ ঘোষ, শ্যামলাল ঘোষ,মতিলাল ঘোষ, প্যারী লাল ঘোষ, যদুলাল ঘোষ ও অ্যাডভোকেট নিবারন লাল ঘোষদের আয়োজন ও উপস্থিতিতে দূর্গা পূজাসহ অন্যান্য পূজায় জাকজমক থাকত বড়বাড়ী। এখনও তাদের বংশধরেরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ বছর প্রাচীন জীর্ণ পুরাতন মন্দির ঘর অপসারন করে সেখানে নতুন করে পাকা মন্দির ঘর নির্মান করা হয়েছে। পুরোপুরি নির্মান কাজ শেষ না হলেও ২০২২ সালের দুর্গা পূজা এই মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হবে।
পাকা মন্দির ঘরে দুর্গাপূজা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন এই মন্দিরের শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়। হাজারী লাল ঘোষের চতুর্থ প্রজন্ম হিসেবে বারিদ বরন ঘোষের ছেলে নীল রতন ঘোষ, সতীনাথ ঘোষ ও গোপী নাথ ঘোষ, ভাতিজা কুমারেশ চন্দ্র ঘোষ রাজু, তাপশ ঘোষ বাসু, অভিজিৎ ঘোষ,শিবেন্দ্র নাথ ঘোষ, অমিত ঘোষ মিজু ও শুভ ঘোষ বেনু পাকা মন্দির ঘর নির্মান ও পুজার আয়োজনে সহযোগিতা ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।
বারিদ বরন ঘোষের বাবা রবীন্দ্র লাল ঘোষের সময়ও দুর্গা পুজা বিশাল এবং জাকজমক আকারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গা পুজাকে ঘিরে এখানে মেলা বসত, কবিগান, জারি ও সারিগান অনুষ্ঠিত হত। মানুষ তিনদিন ধরে এই সকল অনুষ্ঠান উপভোগ করত। তাদের খাওয়া দাওয়াও এখানেই চলত। প্রতিমা বিসর্জনের দিন বিশাল বজরা নৌকা সাজানো হত। তার সাথে রাউতারার জমিদার, বনেদী পরিবারের সূরুত লাল চৌধুরী ও যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, পোতাজিয়ার নির্মল চক্রবর্তি এবং শিশির চন্দ্র রায়দের বজরা নৌকা একসাথে হয়ে বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানের কলবর আরও বাড়িয়ে দিত।
হাজারী লাল ঘোষ কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের প্রজা হওয়ার সুবাদে এবং হাজারী লাল ঘোষের নাম ডাক শুনে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর তাদের বাড়ীতে একবার আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
জেলার বনেদী, প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহি ঘোষ বাড়ীর (বড়বাড়ীর) দুর্গা পূজার আগের মত জৌলুষ আর নেই। তবে উত্তরসুরি হিসেব বারিদবরণ ঘোষ ৮২বছর বয়সে পূর্বপুরুষদের নিয়ম মেনে বংশানুক্রমে তার তত্বাবধানে এবং এখন বেঁেচ থাকা বংশের অন্যান্য সদসদের সাথে নিয়ে এখনও এই পুজার আয়োজন করে যাচ্ছেন। লেখক- গণমাধ্যম কর্মী ও সিরাজগঞ্জ ব্রাহ্মন কল্যাণ সমিতির সভাপতি।