“স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সমৃদ্ধি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই” এই প্রতিপাদ্যকে ধারন করে সিরাজগঞ্জে পালিত হয় জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৪। গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে একটি র্যালি গনপূর্ত ভবন থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে এনডিপি মাছুমপুর শাখার কনফারেন্স রুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর কো-ফোকাল পার্সন ও সহকারী পরিচালক (সিএসপি) সাইফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর। বিশেষ অতিথি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন। এসময় এনডিপি বিভিন্ন প্রোগ্রামের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এনডিপি কিশোরী ক্লাবের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ঠিকই কিন্ত নিরাপদ খাদ্য জোগান দেওয়া সম্ভবপর হচ্ছেনা। নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির জন্য উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে ভোক্তার টেবিল পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। এজন্য নিরাপদ খাদ্যের বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে পালন করা দরকার। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দেশের জনগনকে এই বিষয়ে সচেতন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন। যেসকল সবজিতে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা হয়না সেসকল সবজি বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এসময় তিনি এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিটকে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন বলেন অনিরাপদ খাদ্য গ্রহনের ফলে মানবজীবনে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেক মানুষের হাতে টাকা আছে কিন্ত নিরাপদ খাদ্যের গ্যারান্টি পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি বলেন সুলভ মূল্যে নিরাপদ খাদ্য মানুষের অন্যতম অধিকার। কিন্ত দেশের মানুষ এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য খাদ্য উৎপাদন এবং ভোক্তার খাদ্য গ্রহনের সচেতন হতে হবে। জাতীয় দিবসকে বেসরকারি সংস্থা এনডিপি যে আড়ম্বরভাবে পালন করেছে এজন্য তার দপ্তর থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
কিশোরী ক্লাবের সদস্য বর্ষা খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৪ উদযাপন র্যালিতে অংশগ্রহন করতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত। আলোচনা সভা থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এর ফলে আমরা এবং আমাদের পরিবার উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল ইসলাম বলেন অনিরাপদ খাদ্য গ্রহনের ফলে শিশুর বিকাশে এবং বুদ্দিমত্তায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভোক্তার অধিকার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি। কিন্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বিভিন্ন পর্যায়ে ঝুঁকি রয়েছে। যেমন উৎপাদন পর্যায়ে ঝুঁকি, প্রক্রিয়াজাত ও প্রস্ততকরণ পর্যায়ে ঝুঁকি। উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত খাদ্য নানা পর্যায়ে দূষিত হতে পারে যার মূল কারন অসচেতনতা ও অনৈতিকতা। নিরাপদ বা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ বা প্রস্ততকরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ অনুসরণ করার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষনীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাসট্রিয়াল রঙ, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। এজন্য উপস্থিত ছাত্র- ছাত্রীদের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার পরিহার করে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দুধ, ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিরাপদ খাদ্য বিভিন্ন পর্যায়ে অনিরাপদ হতে পারে। যেমন পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা না রাখা, সঠিক তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে খাবার রান্না না করা, নিরাপদ তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ না করা এবং নিরাপদ পানি ও খাদ্য উপকরণ ব্যবহার না করা। সরকারি বেসরকারি দপ্তর থেকে আগত আমনন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান তিনি।