তাড়াশসিরাজগঞ্জ

বিন্নাফুলে চলে ওদের সংসার

তাড়াশ  প্রতিনিধিঃ  চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আদিবাসী পল্লী কালীবাড়ি গ্রামের আদিবাসী গৃহিনী মিনতি বালা উড়াঁও, শান্তিবালা উড়াঁও ও ভগবতী উড়াঁও সাত সকালে স্বামী ও ছেলে-মেয়েদের সকালের খাবার খাইয়েছেন। তাদের সংসার এখন টানা টানিতে চলছে। কারণ আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তাদের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। ফলে রোজ উর্পাজন করতেও পারে না তাঁরা। তাই এ সময় তাঁরা উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন বিন্না ফুল তোলার কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ওই বিন্না ফুল সংগ্রহ। আর সেগুলো আঁটি বেঁধে মাথায় করে আনা হয় বাড়িতে। পরে সেগুলো শুকিয়ে তৈরি করা হয় ঝাড়ু। আর সেই তৈরী করা ঝাড়ু বিক্রি করা হয় বিভিন্ন হাটে-বাজারে ও গ্রাম এলাকায় বাড়িবাড়ি ঘুর ঘুরে। অবশ্য এ কাজটি নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও করে থাকেন। আর এভাবেই কেটে যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের সময়। আর এ অবস্থা চলছে আদিবাসী অধ্যূষিত অধিকাংশ আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারে। এমনটাই জানালেন তাঁরা।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তাড়াশ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা দল বেঁধে রাস্তার পাশে কিংবা পরিত্যাক্ত ভিটেতে থাকা বিন্না ফুল সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা ফুল কেউ আবার রোদে শুকাচ্ছেন । আবার কেউ আঁটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের সংগুই আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা সংগ্রহ করা বিন্না ফুল দিয়ে তৈরি করছেন ঝাড়ু। তৈরী করা ঝাড়ু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে স্থানীয় হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লায়।

জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার  ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে উড়াও, মাহাতো, রাজবংশী, বিদাস, সিং, কনকদাস ও স্বল্প সংখ্যক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ রয়েছেন।

এক সময় এসব সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা বনে-জঙ্গলে ঘুরে শিয়াল, খরগোশ, কচ্ছপসহ নানা প্রভৃতির পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বন-জঙ্গল উজার হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহে ভাটা পড়েছে। ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেশীর ভাগ নারী ও পুরুষরা এখন কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা এখন মাঠে ধান লাগানো, ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রমি এবং অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক হওয়ায় এলাকায় কৃষি কাজে তাঁদের বেশ চাহিদাও রয়েছে।

স্থানীরা জানান, সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তাদের তেমন কোন কাজ থাকে না। তাই এ সময় আদিবাসী নারীদের রাস্তার পাশে, ভিটে ভাটিতে বিন্না ফুল তুলতে দেখা যায়।

উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ী গ্রামের জ্যোতিস মাহাতো জানান, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে এলাকায় তাদের কোনো কাজ থাকে না। তাঁরা অর্থ সংকটে পড়েন। তাই এ সময় অনেক আদিবাসী নারী-পুরুষ কৃষি কাজে আগাম শ্রম বিক্রি করেও থাকেন।

বিন্না ফুল তুলতে আসা দেশী গ্রাম ইউনিয়নের যোশাই পাড়ার আদিবাসী নারী সাবিত্রী বালা সিং বলেন, বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসে এলাকায় তেমন কোন কাজ থাকে না। এ সময় কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। তাই বসে না থেকে উর্পাজনের জন্য বিন্নাফুল দিয়ে ঝাড়ু বানিয়ে বিক্রি করা হয়।

তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সমাজসেবা অধিফতরের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ জীবনমান উন্নয়নে সরকারী ভাবে বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকেন। আর অস্বচ্ছল পরিবারের স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছেলে -মেয়েরা এককালীন অর্থ ও উপবৃত্তি পেয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button