‘বৈশ্বিক পুষ্টিতে দুধ অপরিহার্য’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সিরাজেগঞ্জের কামারখন্দে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এর আয়োজনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিট (প্রাণিসম্পদ খাত) এর আওতায় রোববার (২ জুন) সকালে রেজিয়া মোকসেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাইকশা বাজারে ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুল এর প্রায় ৫ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দুগ্ধজাত পণ্য মাঠা পান করানো হয়।
পরে রেজিয়া মোকসেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনডিপির পরিচালক (ঋণ সহায়তা কর্মসূচি) মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কামারখন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রেজিয়া মোকসেদ সরকারি প্রাথমিক এর প্রধান শিক্ষক মোছা. শামছুন্নাহার, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোছা. শাহানা পারভীন ও মোছা. শাকিলা জাহান, ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোছা. শামীমা খাতুন, সহকারী শিক্ষক মো. বুলবুল আহমেদ, এনডিপির প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মইনুল হাসান, এনডিপির উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক (এমআইএস) বিজয় আহমেদ, প্রোগ্রাম সহকারী সবুজ হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সুস্থ-সবল শরীরের জন্য সব বয়সী মানুষেরই নিয়মিত দুধ পান করা উচিত। দুধের মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়া রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। দুধ নিয়মিত পান করলে একদিকে যেমন আমদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, ঠিক তেমনই পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।
উল্লেখ্য. বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জুন দিবসটি পালিত হয়। দুগ্ধ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বৈশ্বিক পুষ্টিতে দুধ অপরিহার্য’।
দেহের মধ্যে জৈবিক ক্রিয়া, বৃদ্ধি ও শরীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব উপাদান রয়েছে দুধে। প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে গড়ে ৩.৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে রয়েছে ৪২ ক্যালরি শক্তি, শর্করা ১ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, কোলেস্টেরল ৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৯৫ মিলিগ্রাম। স্বল্প ফ্যাটযুক্ত এবং ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় দুগ্ধজাতপণ্য সাধারণত রক্তচাপ কমায়। দিনে ২০০-৩০০ মিলি. দুধ গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে। ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন মানবদেহের মূল পুষ্টি উপাদান, যা পেশি ও হাড়ের গঠন ও গুণমানকে প্রভাবিত করে। বর্তমান যুবসমাজ কোমল পানীয় ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করতে পারে না। কিন্তু কোমল পানীয় স্বাস্থ্যসম্মত নয়, এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি বিষের মতো দেহের ক্ষতি করে। তাই এসব কোমল পানীয় পরিহার করে দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্য গ্রহণ করা উচিত।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২১ অর্থবছরে দুধের চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন (জনপ্রতি চাহিদা ২৫০ মিলি ধরে), যার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ দশমিক ৬৩ মিলি।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। দুগ্ধজাত খাবার, যেমন পনির ও দই আদর্শগতভাবে স্বাস্থ্যকর এজিং প্রোডাক্ট হিসাবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (২০১৫) অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর এজিং হলো কার্যকর ক্ষমতার বিকাশ এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার প্রক্রিয়া, যা বার্ধক্যে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। দুগ্ধজাত দ্রব্য বয়স্কদের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে, পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং বার্ধক্যজনিত পেশি ও হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই দুগ্ধজাত খাদ্য বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাবার হিসাবে বিবেচিত। বিশ্বব্যাপী দুগ্ধ খাতের উন্নয়নে আরো গবেষণার প্রয়োজন। বিশেষ করে আরো বেশি পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার (হেলদি ফাংশনাল ডেইরি ফুডস), সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যা ভোক্তার হেলদি অ্যাজিংয়ে সহায়তা করবে। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ করে দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মেধাবী জাতি গঠন করা এবং বার্ধক্যে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।