আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ জেলার ৬ টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই গত সোমবার, ৪ ডিসেম্বর শেষ হয়। যাচাই বাছাই হয় সিরাজগঞ্জ-৪, সিরাজগঞ্জ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থীতা। এনিয়ে গত রোববার ও সোমবার ( ৩ ও ৪ ডিসেম্বর) দুদিনে সিরাজগঞ্জ জেলার ৬ আসনের মনোনয়ন পত্র বাছাই শেষে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ও ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়।
গতকাল সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহিদ একে শামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিরাজগঞ্জ-০৪, সিরাজগঞ্জ-০৫ ও সিরাজগঞ্জ-০৬ আসনের ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ও ৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর আগে রোববার, ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২ ও সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের দাখিলকৃত ২৩ আসনের মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই করে ১৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ও ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়।
এনিয়ে দুদিনে জেলার ৬ আসনে ৪৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র যাচাই করে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ও ও ১৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক সিরাজগঞ্জ ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ সময় ৬ টি আসনের প্রার্থী ও তাদের প্রস্তাবক ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বির লক্ষ্যে জেলায় মোট ৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেন। এরমধ্যে ৪৩ জন প্রার্থী সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা রিটানিং অফিসারের নিকট নিজ নিজ মনোনয়নপত্র দাখিল করে। উত্তোলনকৃত মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বাছাইয়ে আসন অনুযায়ী সিরাজগঞ্জ ১ আসনে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ জন, সিরাজগঞ্জ ২ আসনে ৫ জনের মধ্যে ১ জন এবং সিরাজগঞ্জ ৩ আসনে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ জন, সিরাজগঞ্জ ৫ আসনে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১ জন, সিরাজগঞ্জ ৬ আসনে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ জন প্রার্থীর মনোনয়নে ত্রুটি থাকায় তাদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে জেলা রিটার্নিং অফিসার।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জেলার ৬ আসনে দাখিলকৃত প্রার্থীরা হলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করে সাতজনই জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজনের মনোনয়ন বৈধ হলেও দুজনের বাতিল হয়েছে। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় (আ.লীগ) মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি) সাইফুল ইসলাম (জাসদ) শফিকুল ইসলাম (এনপিপি) ও সবুজ আলী (বিএনএম)।
এ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থী জাকের পার্টির মো. রেজাউল করিম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তালুকদার।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ৬ প্রার্থী মনোনয়ন উত্তোলন করে জমা দিয়েছেন পাঁচজন। এদের মধ্যে চারজনের মনোনয়ন বৈধ ও একজনের বাতিল হয়। এরা হলেন, জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী (আ.লীগ), আমিনুল ইসলাম ঝন্টু (জাতীয় পার্টি), মো. আব্দুর রুবেল সরকার (জাকের পার্টি) ও সাদকাত হোসেন খান (ওয়ার্কাস পার্টি)।
এ আসনে মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়া প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সোহেল রানা।
সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ১১ প্রার্থী মনোনয়ন তুলে সবাই জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪টি মনোনয়ন বৈধ হলেও সাতজনের বাতিল হয়। এরা হলেন ডা. আব্দুল আজিজ (আ.লীগ), আলমগীর হোসেন (জাকের পার্টি), গোলাম মোস্তফা (বিএনএম) ও জাকির হোসেন (জাতীয় পার্টি)। বাতিল হয়েছে নুরুল ইসলাম প্রামাণিক (মুক্তিজোট), মোজাফফর হোসেন (স্বতন্ত্র), নুরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), শরিফুল আলম খন্দকার (স্বতন্ত্র), সাখাওয়াত হোসেন (স্বতন্ত্র), আব্দুল হালিম খান দুলাল (স্বতন্ত্র) ও স্বপন কুমার রায়ের (স্বতন্ত্র) মনোনয়ন।
সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে ৬ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করে চারজন জমা দিয়েছেন। এখানে সব প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে। প্রার্থীরা হলেন- শফিকুল ইসলাম শফি (আ.লীগ), আবদুল্লাহ আল হাসেম (জাতীয় পার্টি), হিলটন প্রামাণিক (জাতীয় পার্টি) ও মোস্তফা কামাল বকুল (জাসদ)।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ৭ প্রার্থী মনোনয়ন তুলে সবাই জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে একজনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এরা হলেন – আব্দুল মোমিন মণ্ডল (আ.লীগ), আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (স্বতন্ত্র), চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন (স্বতন্ত্র), ফজলুল হক (জাতীয় পার্টি), নাজমুল হক (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) ও আব্দুল হাকিম (বিএনএম)। এ আসনে বাতিল হয়েছে নুরুল ইসলাম সাজেদুলের (স্বতন্ত্র) মনোনয়ন।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে ১১ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করলেও জমা দেন ৯ জন। এর মধ্যে সাতজন বৈধ ও দুজনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এরা হলেন- চয়ন ইসলাম (আ.লীগ), মোজাম্মেল হক (জাসদ), তারিকুল ইসলাম (তৃণমূল বিএনপি), রেজাউল করিম বিপ্লব (জাকের পার্টি), মোকতার হোসেন (জাতীয় পার্টি), কাজী মো. আল আমিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি) ও মোহাম্মদ আলী (বিএনএম)।
এ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু (স্বতন্ত্র) ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যুদ্ধ অপরাধী ব্যরিস্টার কোরবান আলীর ভাগ্নে রেজাউর রশিদ খান (ওয়ার্কাস পার্টি)।
উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম রাজনৈতক দল সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এছাড়া, ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এবারই সর্বাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ৪৪ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছেন।