সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শাহেদ আলী সেখ, সলঙ্গা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ: লতিফ বেপারী সহ ৬জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম শেখ এর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সলঙ্গা থানার মামলা নং-১৩, তারিখ: ৯.৯.২০২৪ইং। অপরদিকে শিক্ষককে মারধর, চাঁদাবাজী ও বালু দখলের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি থেকে সলঙ্গা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ: লতিফ বেপারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সলঙ্গা থানার ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শাহেদ আলী সেখ ও গভনিং বডির বিতর্কিত দাতা সদস্য আ: লতিফ বেপারী কলেজের বিভিন্ন অর্থ আত্মসাত ও বিভিন্ন দূর্নীতির সাথে জড়িত থাকায় বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল আলম সেখ ও কলেজের ৩১ জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকগণ ফুলজোড় গত ২৭ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের আলোকে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ’র শাহেদ আলী শেখ এর বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি তদন্ত করার জন্য রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো: হাফিজুর রহমানকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ প্রাপ্ত হয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তদন্ত করার জন্য চিঠির মাধ্যমে (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং) তারিখে তদন্তের/শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। শুনানী (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪) কলেজে সকাল ১১টায় কলেজে প্রাঙ্গনে শুরু হয়। শুনানী শুরু হওয়ার সাথে সাথে মূল অভিযোগকারী বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম শেখ তদন্ত বোর্ডে যাওয়ার সময় রুমের দরজার সামনে অধ্যক্ষ সাহেদ আলী শেখ এর সন্ত্রাসী বাহিনী নলকা ইউনিয়নের হোড়গাঁতী গ্রামের মৃত ওসমান সরকার পুত্র আ: লতিফ সরকার (৫৫), আল আমিন ওরফে নানু বেপারী (৪৮), লতিফ সরকার এর পুত্র রেজাউয়ানুল ইসলাম ফয়সাল (২৫), আল আমিন ওরফে নানু বেপারী’র পুত্র আকাশ(২১), তুলা আবুল কালাম এর পুত্র আলমগীর (৩৪) সহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন দুবৃর্ত্তরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মূল অভিযোগকারীর উপরে হামলা চালায়। হামলায় প্রধান অভিযোগকারী নুরুল আলম শেখকে বেধরক মারপিট করতে করতে মহাসড়কে নিয়ে এসে ফেলে দেয়।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় মূল অভিযোগকারী নুরুল আলম শেখকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। উন্নত চিকিৎসা জন্য বর্তমানে এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ পলাশ এর স্বাক্ষরিত একটি পত্রে সলঙ্গা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বেপারী নামে অভিযোগকারী শিক্ষককে মারপিট, চাঁদাবাজি ও বালুমহল সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ও সলঙ্গা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ: লতিফ বেপারী সহ ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি পরিপ্রেক্ষিতে এযাবত কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ’র দূর্নীতির অভিযোগের আলোকে রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু তদন্ত করার জন্য আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। তদন্ত অসম্পূর্ণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদ আলী শেখ এর বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, বিদেশ অবস্থানরত অধ্যাপক ছালমা খাতুনের বেতন ভাতা উত্তোলন, অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে আয় ব্যয় হিসাব লিপিবদ্ধ নেই, কোন অডিট নেই। কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়ম, কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাত, ২০২২ সালে নিয়োগের নামে ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাত, কলেজের গভর্নিং বডির গঠনে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা সহ ১২টি পয়েন্ট উল্লেখ করে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন কলেজের ৩১জন সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও হোড়গাঁতী গ্রামের কৃতি সন্তান, বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল আলম শেখ। অপরদিকে সলঙ্গা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ: লতিফ বেপারী আজিজ ফিলিং স্টেশন সহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজি ও গোলাম হোসেনের বালু স্তুপ দখলের অভিযোগ রয়েছে।