গত বুধবার, ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ ঘোষণা করা হয়। এবছর ১১টি বিষয়ে ১৬ জন গুণি ব্যক্তি পেয়েছেন এ পুরস্কারে সম্মানিত হন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের দুই কৃতীজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. জুলফিকার মতিন ও কথাসাহিত্যিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান অন্যতম। গত বুধবার বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. হাসান কবির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৩’ এর সম্মানিত সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে এবং বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনক্রমে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ ঘোষণা করা হলো। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ড. জুলফিকার মতিন প্রবন্ধ বা গবেষণা ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন।
আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী/ মুক্তগদ্যে ইসহাক খান এ পদকে সম্মানিত হন।
উল্লেখ্য, ড. জুলফিকার মতিন-এর জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৪ জুলাই পাবনার মৈত্রবাঁধায়। কচিকাঁচার আসর, দৈনিক ইত্তেফাক-এ তার প্রথম কবিতা ‘আমরা’ প্রকাশ পায় ১৯৫৬ সালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বৈরিণী স্বদেশ তুই’। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ, তাই তো সংবাদ নেই, বৈশাখে ঝড়জল, রোদের কবিতা, নীলিমাকে চাঁদ দেব বলে, ঘামের ওজন কত ভারী, দুঃখ ভোলার দীর্ঘশ্বাস, এই সংবাদ এই একুশে, কার চরণচিহ্ন ধরে, জলের সংসার ইত্যাদি।
তার লেখা উপন্যাস সাদা কুয়াশার পাখি, রৌদ্রছায়া ভালোবাসা, বাড়ির নাম পান্থশালা, মানব মানবী। গল্পগ্রন্থ রাখ তোমার উদ্যত বাহু, পাগল হবার রূপকথা, আকাশ বাসর, অন্যরকম, টেলিমেকাস, অন্ধকারের জন্তুরা এবং মুষল পর্ব। ১৯৭১ সালে কৃষকগঞ্জ বাজার, সলপ-এ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তার শিক্ষকতা জীবনের শুরু হয়। অবসর গ্রহণের পর এখন রাজশাহীতেই বাস করেন বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক।
অন্যগুণিজন ইসহাক খান কথাসাহিত্যিক, গল্পকার ও নাট্যকার। তার জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কানসোনা গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিঅর্জন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান জীবনের শুরুতে যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। পরে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন। গল্প, উপন্যাস ও শিশুতোষ বইসহ মোট ৩৫টি বই প্রকাশ হয়েছে। টিভি নাট্যকার হিসেবেও বিশেষভাবে পরিচিত। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রায় শতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে ময়মনসিংহ, কামালপুর, হাতিবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে এই কথাসাহিত্যিক অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৮২ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ গল্পকার হিসেবে পুরস্কৃত হন। এ ছাড়া সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার’, ‘সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা’, ‘শুভজন লেখক সম্মাননা’ ও ‘আমরা ক’জনা সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
এবছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রাপ্ত অন্যরা হলেন- কবিতায় শামীম আজাদ, কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী, অনুবাদে সালেহা চৌধুরী, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে (যাত্রা/পালা নাটক/সাহিত্যনির্ভর আর্টফিল্ম বা নান্দনিক চলচ্চিত্র) মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক।
এ ছাড়া শিশুসাহিত্যে তপংকর চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় আফরোজা পারভিন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে ইনাম আল হক, ফোকলো- এ পদক পেলেন তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাশ।
দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক পাঠাগারের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জের এই দুইজন গুণি ব্যক্তির পদক প্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন বার্তায় তিনি জানান বাংলা সাহিত্যে অবদানে সিরাজগঞ্জের এই দুজন কৃতীব্যক্তির জন্য আমরা জেলাবাসী গর্বিত।