শাহজাদপুর প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আলোচিত নবম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র সুমন (১৫) হত্যা মামলায় বাদী পক্ষকে ১৫ লাখ টাকা প্রদানের রায়ে রফা করলেন বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম। ১২জন আসামীকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে টাকা বাদি পক্ষকে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল শনিবার,২৮ মে, দিনব্যাপী শালিস বৈঠক করে বিবাদী পক্ষের নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বাদি পক্ষকে প্রদানের আশ^াসে মামলা নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এব্যাপারে বেলতৈল ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীরা বাদী পক্ষকে কৌশল ও চাপ প্রয়োগ করা অভিযোগ উঠেছে।
বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ১নং ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজার আহ্বানে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্কুল ছাত্র সুমন হত্যার শালিস করেন জালালপুরের আব্দুর রশিদ, হাবিবুল¬াহ নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মাজেদসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
নিহত সুমন উপজেলার বেলতৈল গ্রামের সুলতান প্রামাণিকের ছেলে ও বেলতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৫ সদস্যের রায় বোর্ডের পক্ষে রায় ঘোষণা করছেন হাবিবুল¬াহ নগর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আব্দুল মাজেদ। তিনি বলছেন, শিশুরা মার্ডার করেছে এটা সত্য। বাদির পারিবারিক অবস্থা ভালো না। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমরা আলোচনা করে ১২ জন আসামীকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেছি যে টাকা বাদি পক্ষকে দেওয়া হবে বলে রায় ঘোষনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য গত বছরের ২৪ জুন সুমনের পিতা সুলতান প্রামানিক ১২ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে দোষী সাব্যস্থ করে আদালতে চার্জশীট প্রেরন করে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অপরদিকে গত বছরের ২৯ জুলাই সুমন হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে চর-কাদাই গ্রামে মানববন্ধন করে গ্রামবাসী ও নিহতের স্বজনেরা। আর এই মানবন্ধনেই ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে সুমন হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে শালিস বৈঠকের আহ্বায়ক বেলতৈল ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজা জানান, বিচার করে আসামীদের ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের বিচার করা যায় কিনা সেসব আইন কানুন জানা নাই। এদিকে প্রভাবশালীদের কারনে চেষ্টা করেও বাদি পক্ষের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রাম্য সালিশ বা কোন চেয়ারম্যান হত্যা মামলার বিচার করতে পারে না এবং এ ধরনের কোন আইন বাংলাদেশে নাই; যদি করা হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায় ভাবে করেছে। এ ধরেনের বিচার অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞ আইনজীবী।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, তারা শালিস বৈঠক করে যেটাই করুক মামলা তো আছে কোর্টে। এটা কোর্টেও মাধ্যমেই ফয়সালা করতে হবে।