তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারের ১২ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করা হয়। গত মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া নিহত বিকাশ সরকারের বোনের ছেলে রাজিব ভৌমিক (৩৫) এ হত্যা কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মোটা অঙ্কের ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে মামা-মামী ও মামাতো বোনকে হত্যা করেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রাজীব। হত্যার অভিযোগে রাজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গতকাল বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম মন্ডল ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫) এবং ভিকটিমগণ পরস্পর আত্মীয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার এর বোন প্রমিলা রানীর ছেলে রাজীব কুমার ভৌমিক। হত্যাকারী তার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তার ভাগিনা রাজীর কুমার ভৌমিককে ব্যবসার পুজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন। ব্যবসা চলমান থাকাকালীন হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশ’সহ প্রায় ২৬ লাভ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছরে এসে হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিকের কাছে তার মামা ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবী করেন। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার গত ২২ জানুয়ারি তারিখে দাবিকৃত টাকা ৭/৮ দিনের মধ্যে ভাগিনাকে ফেরত দেয়ার জন্য অনেক চাপ দেয় এবং টাকার জন্য হত্যাকারী ও তার মা (ভিকটিমের বোন)কে ফোনে অনেক বকাবকি করে। হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে মনঃকষ্ট পাওয়ায় তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ফলশ্রুতিতে বিগত গত ২৭ জানুয়ারি তারিখে বিকেল ৪.৪৮টায় মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় আসতে চায়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তাড়াশের বাহিরে থাকায় তার ভাগিনাকে টাকা নিয়ে সরাসরি তার তাড়াশের বাসায় এসে মামীর সাথে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন। হত্যাকারী রাজীব কুমার বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে তার মামী এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকারী রাজীব কুমারকে কফি খাওয়ানোর জন্য তার মামী সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষে বাসার নিচে দোকানে গেলে হত্যাকারী রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোনের মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ইতোমধ্যে তার মামী কফি কিনে বাসায় প্রবেশ করলে তার মামীকেও একইভাবে রড দিয়ে মাথায় কুপিয়ে এবং গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করে। মামী এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তার মামাকেও প্রথমে রড দিয়ে আঘাত করে এবং গলাকেটে হত্যা নিশ্চিতের পর লাশ টেনে বেডরুমে রেখে রুমে তালা মেরে উল্লাপাড়া ফিরে যায়। যাওয়ার পথে সে লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যায় এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখে।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ভোরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে একই পরিবারের স্বামী বিকাশ সরকার, স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাদের মেয়ের পারমিতা সরকার তুষি (তিন জনের) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি তিন মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য শহিদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওইদিন রাতেই স্বর্ণা সরকারের বড় ভাই সুকমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ দিকে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে নিহতের মা ও ভাইয়ের সাথে দেখা করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার। এর আগে একই দিন সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হাওলাদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব দে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত খুনিদের শনাক্ত করে খুনির দৃষ্টি মূলক শাস্তি দাবী করেন।
এ দিকে বুধবার সন্ধ্যায় মর্গে থেকে ওই তিন জনের মহদেহ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার বিকাশ সরকারের বাড়িতে আনলে লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। তাঁদের দাহ কার্যে শত শত লোক অংশ নেন।