চৌহালী প্রতিনিধি, ইদ্রিস আলী : চৌহালীতে যমুনার পানি আবারো বদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বদ্ধিপেয়ে বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার বাঘুটিয়া, খাষপুখুরিয়া, সদিয়াচাঁদপুর, স্থলচর, ঘোরজান, উমারপুর, খাষকাউলিয়া ও এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙ্গনে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। বাঘুটিয়া ইউনিয়নের শতবছরের পুরনো চরসলিমাবাদ কবরস্থান যমুনার কড়াল গ্রাসে বিলিন। কবরস্থানের পাশেই ভাঁসতে দেখা গেছে অগনিত লাশ। হুমকির মূখে পরেছে কারিগরি কলেজ, পয়লা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা সহ ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাজার ও বসতি। গত কয়েক দিনে পানি বৃদ্ধিতে উপজেলায় ৪৮ কোটি টাকার নদী শাসন বাধ প্রকল্পে বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজে ধস দেখা দিয়েছে। বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভুতের মোড় এলাকায় বসতি, পাকা সড়ক, কবরস্থান নদী গর্বে বিলীন হয়েছে।
ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে ঘর ভেঙ্গে আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা নগন্য বলে জানান এলাকা বাসি।
মৃত্যুর পর যে জায়গাটিতে মাটি দেয়া হবে সে জায়গাও নদীতে যাচ্ছে, পুরনো লাশ গুলো যমুনায় ভাসতে দেখেও নিজের ঘর-বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে ভেসে যাওয়া লাশ গুলো ধরতে পারেনি তারা। বিনানই গ্রামের মো. আল হাদি জানায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারনে গত কয়েকদিনে ৩ থেকে ৪শ’ বাড়ি-ঘর ভেঙ্গেছে। চরসলিমাবাদ কবরস্থান বিলিন হয়েছে ৬-৭ লাশ উদ্ধার করে অন্য কবরস্থানে দাফন করা হলেও অগুনিত লাশ ভেসে গেছে।
হুমকির মধ্যে রয়েছে নদী শাসন বাধ, মিটুয়ানি বিসিএস উচ্চ বিদ্যালয়, দেওয়ানগঞ্জ বাজার,মসজিদ,বিনানই বাজার, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আলিম মাদরাসা, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র,বাঘুটিয়া কারিগরি কলেজ, চৌবাড়িয়া সিকদার পাড়া কারিগরি কলেজ, কয়েকটি কবরস্থান, ঘরবাড়ি ফসলী জমি, বহু প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মো. ছানোয়ার হোসেন, আব্দুস ছাত্তার জানান, ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি আমরা। বাড়িঘর হারিয়ে ভাঙ্গন কবলিত মানুষ অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত এসব মানুষ ছেলে মেয়ে নিয়ে এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ, নির্মানের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আ. কালাম মোল্লা বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে ডাম্পিং কাজ, শিক্ষা অঙ্গন, বাজার ও বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে, আমরা সাহায্য চায় না টেকশই বাঁধ ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি দেখতে চাই। ডাম্পিংই বদলে দিতে পারে বাঘুটিয়ার চিত্র।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ’লীগের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন বলেন, চৌহালীর পুর্ব অঞ্চল রক্ষায় সরকার ৪৮কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন, তারই আলোকে বাঘুটিয়া ভুতের মোড় এলাকার শিক্ষা অঙ্গন সহ সবকিছু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং অব্যাহত থাকবে। আমি পানি উন্নয়ন বোড ও এমপি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে কাজের গতি বৃদ্ধি ও জিও ব্যাগ বাড়ানো হবে ইনশাআল্লাহ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, ভাঙ্গন এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। আরও জিও ব্যাগের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আশা করি আগামী শুষ্ক মৌষুম নাগাদ শতভাগ ডাম্পিং কাজ শেষ হলে ভাঙ্গন রোধ হবে ইনশা’আল্লাহ।